ভাদ্র-অশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে চোখে পড়ে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি। শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। শরতের এই অপরূপ রূপ দেখে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। তিনি শরৎকে দেখেছেন, শরতের কাশবনে পৃথিবীর মায়াভরা রূপ দেখতে পেয়েছিলেন। নদীমার্তৃক দেশের নদীর তীরগুলো ঘেঁষে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ আর বাতাসে দোল খাওয়া সে অপরূপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার বিটিআরআই সংলগ্ন ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাড় ঘেষে এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে দেখা গেছে সাদা কাশফুলের প্রস্ফুটিত রূপ-লাবণ্য, যা প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অনন্য রূপে। এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের।
প্রতিদিন প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত ভানুগাছ সড়কের কাশফুলের বালুচর। কাশফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয়রা ছাড়াও শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। প্রতিদিন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণির মানুষ এখানে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাড়ের কাশবনের দৃশ্য দেখে মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে কাশফুলের সাথে অনেক পথচারীকেও ছবি তুলতে দেখা যায়।
ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকজন এখানে এসেছেন অনিন্দ্য সুন্দর এই কাশফুল দেখতে। কেউ কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কাশফুলের গাছগুলোর ভেতরে ঢুকে পড়ছেন অনেকেই। অনেকে আবার মুক্ত বাতাসে পুরো বালুচর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এই অপরূপ সৌন্দর্য মন কেড়েছে পর্যটকদের। এককথায় শরতের কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা।
এখানে প্রতি বছর আগস্টের শুরু থেকে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। তাই বছরের দুই-আড়াই মাস এখানে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, ঋতু পরিক্রমায় বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। রাশি রাশি কাশফুল ছড়াচ্ছে শ্বেত শুভ্র নৈসর্গিকতা। কাশফুলের বালুচরে অপরূপ সাদা কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য দেখতে কতইননা মনোরম। এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এবং কাশফুলের হেলেদুলে থাকার দৃশ্য অপূর্ব।
ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাড়ে কাশফুল দেখতে আসা তামিম, সাহেদ, কলি হাসান, হালিমাসহ সুমি বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, চা বাগানের ফাঁকে ছড়ার পাশে দু’দিকে এতো সুন্দর সাদা কাশফুলো মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। সেই সৌন্দর্য দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ।
স্থানীয় ট্যুরগাইড শ্যামল দেব বর্মা বলেন, দিগন্ত জোড়া কাশফুলের মনোরম দৃশ্য মানব মনকে করে তোলে আন্দোলিত ও প্রফুল্ল। শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ষড়ঋতুর দেশে শরৎ ঋতু আমাদের কাছে রয়ে যাচ্ছে যেন অনাদৃতই। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাশে কাশফুলের বালুচরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাথা উঁচু করে দোল খাচ্ছে শুভ্র সাদা কাশফুল। শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের কাছে জায়গাটি প্রায় দুই মাসের জন্য বেশ আর্কষণীয় থাকে। কাশবনে কাশফুল ফোটে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে প্রাণ-প্রকৃতিতে। ছড়ার পাশে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিটিআরআই এর ব্রিজ পর্যন্ত এখন কাশফুলের শুভ্র চাদরে ছেয়ে গেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, কাশফুলের আদি নিবাস রোমানিয়ায়। কাশ ছন গোত্রীয় এক ধরণের ঘাস। এ উদ্ভিদটি সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়। আপনা থেকে কাশবনের সৃষ্টি হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করে। কাশবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য টিকিয়ে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কেকে/ এমএস