ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের গুইটা কৃষ্ণনগর এলাকায় ২৫০ বছরের পুরানো মন্দির, বিদ্যালয় ও শত শত পরিবারের বসতভিটা রক্ষায় ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, কিছু আবাসন প্রকল্পকে সুবিধা দিতে একটি মহল মানুষের বসতভিটা, মন্দির, মসজিদ ও স্কুলসহ জনবসতি এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে কিছু অসাধু লোক। তাই, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বদলাতে এবং খালি জায়গা দিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী, প্রবীণসহ কয়েক শত মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত খালি জমি থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক বসতবাড়ি, মন্দির, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়েই সড়কের নকশা তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০০-৩০০ পরিবারের ভিটেমাটি ধ্বংসের মুখে পড়বে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নকে অজুহাত করে মানুষের ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় উপাসনালয় ভাঙা হচ্ছে। রাস্তা মানুষের জন্য, কিন্তু সেই রাস্তা যদি মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয় তবে তা উন্নয়ন নয়, ধ্বংস।
তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত সড়কের উচ্চতা অনেক পরিবারের ছাদের সমান হয়ে যাবে, যা পরিবার ও শিশুদের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এর আগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকাতেও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তারা দাবি করেন, পর্যাপ্ত খালি জমি থাকা সত্ত্বেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জনবসতির উপর দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সামাজিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রকল্প এলাকা ঘোষণা করে। এসব কোম্পানি প্রভাব খাটিয়ে ও ঘুষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তন করছে। ফলে খালি জমি ফেলে দিয়ে জোরপূর্বক জনবহুল এলাকার মধ্য দিয়েই রুট টানা হচ্ছে।’
স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের প্রক্রিয়া কেবল ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতি, শিক্ষার পরিবেশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপরও আঘাত হানছে।
তারা দাবি করেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প অবশ্যই মানবিক ও পরিবেশবান্ধব হতে হবে। অন্যথায় এটি সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করবে, আর হাউজিং সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালীরা লাভবান হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা সরকারের কাছে দাবি জানান- প্রস্তাবিত রাস্তা ও এক্সপ্রেসওয়ের রুট অবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে এবং মন্দির, বিদ্যালয় ও স্থানীয়দের ভিটেমাটি রক্ষা করতে হবে।
অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
কেকে/ এমএ