কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) নবনিযুক্ত মেয়র পদমর্যাদা প্রাপ্ত প্রশাসক মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুসিকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া ও মাইন উদ্দিন চিশতীসহ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কুমিল্লা জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সভায় মো. শাহ আলম নগরীর চলমান বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও শহরের সমস্যাগুলো শুনতে চান। এর পর সাংবাদিকরা একে একে নগরবাসীর ভোগান্তি ও নিত্যদিনের সংকটগুলো প্রশাসকের সামনে উপস্থাপন করেন।
সাংবাদিকরা বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীর অন্যতম বড় সমস্যা হলো অসহনীয় যানজট। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে শহরের মধ্যে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ এবং বহুতল ভবনের আধিক্য। কান্দিরপাড় এলাকায় অনেক বহুতল ভবন গড়ে উঠায় শহরে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।’
তারা আরও বলেন, ‘এছাড়া নগরীতে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোকে নির্দিষ্ট লাইসেন্স ও চালকদেরকে নির্দিষ্ট পোশাক ও আইডি কার্ডের আওতায় আনার ঘোষণা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। এর ফলে অনিয়মিত অটোরিকশা চলাচল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, কান্দিরপাড়ের ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোও নগরবাসীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ‘
সাংবাদিকরা উল্লেখ করেন, নগরীর টমসমব্রিজ থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য জোর দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে নগরীর প্রধান সমস্যা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতার কথাও তোলা হয়। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, যা নাগরিক জীবনে মারাত্মক ভোগান্তি ডেকে আনে।
পার্কিং ব্যবস্থার অভাবও কুমিল্লা নগরীর জন্য একটি গুরুতর সংকট হিসেবে উঠে আসে। বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনার সামনে কোনো পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনই যানজট দেখা দেয়। এ সমস্যার কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাংবাদিকরা এসব সমস্যার সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
মো. শাহ আলম বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান চিত্র আমি পরিষ্কারভাবে জানি। এসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসক হিসেবে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করবো। খুব শিগগিরই নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে সেবার মান বৃদ্ধি পায়। শহরের যেসব রাস্তা এখনো সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আসেনি, সেগুলোও আমরা আওতাভুক্ত করবো। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতার সমাধানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। অটোরিকশাগুলোকে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ডের আওতায় আনা হবে। শহরের যানজট নিরসনে পার্কিং ব্যবস্থা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আর কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। প্ল্যান পাশের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম মেনে কাজ হবে। অতীতে যত অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর তদন্তে ইতোমধ্যেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমিল্লার মানুষ যাতে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত নগর পায়, সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করব।’
কেকে/ এমএ