মৌসুমে কাটা ইলিশ বা লবণ দেয়া নোনা ইলিশকে প্রক্রিয়াজাত করে সারাদেশে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন চরফ্যাশনের জেলেরা। এ সিজনাল ব্যবসায় কোটি টাকা আয় হয় নোনা ইলিশ বিক্রি করে। প্রক্রিয়াজাত শেষে এ ইলিশ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
এ অঞ্চলের জেলেরা ইলিশ শিকার করে তাজা ইলিশ বিক্রির পাশাপাশি নরম হয়ে যাওয়া ইলিশ কেটে লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করে। এই ইলিশ স্থানীয় হাট বাজারে নোনা ইলিশ বলে বিক্রি করা হয়। দেশে এই ইলিশের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই নোনা ইলিশ তৈরির জন্য মৎস্যঘাট গুলোতে চলে ব্যস্ত সময়।
চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ সামরাজ মৎস্যঘাট ঘুরে দেখা যায়, নোনা ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলেরা ইলিশের আঁশ, পেটি ও ডিম ছাড়িয়ে তা পিচ পিচ করে কাটিং করে পানিতে ধুয়ে নিচ্ছে। এরপর পানি ঝরে গেলে মোটা লবন বা সামুদ্রিক লবণ দিয়ে হোগলা বা চাটাইয়ের মধ্যে সাজিয়ে রাখছে।
ব্যবসায়ী জসিমউদদীন মহাজন বলেন, এ নোনা ইলিশের প্রক্রিয়া ও ব্র্যান্ড করা যায় তাহলে এই ইলিশ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আরো বেশি রপ্তানি করা সম্ভব।
জানা যায়, চরফ্যাশনের ব্যবসায়ীরা সিজনে অল্প দামে বড় ও মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনে কাটিং শেষে মোটা লবণ দিয়ে কিছুদিনের জন্য তা বড়ো ড্রামের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়। পরে ইলিশের সিজন শেষে তা স্থানীয় হাটবাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। ভোজনবিলাসী মানুষ প্রতিদিনের খাদ্যে অথবা অতিথি আপ্যায়নে এ নোনা ইলিশ পরিবেশন করেন। এ নোনা ইলিশের সুঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় যা স্বাস্থ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যোগায়।
ঘাটে আসা পাইকাররা হাকডাকের মাধ্যমে ইলিশ কিনছেন আড়তগুলো থেকে। পরে সেগুলো নোনা ইলিশ তৈরী করে ৬ থেকে ৭মাস মৎস্যঘাটে স্তূপ করে এবং ড্রামের মধ্যে রেখে নোনা ইলিশগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়। পরে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এই নোনা ইলিশ দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।
নোনা ইলিশ প্রস্তুতকারক বশারত উল্যাহ মিয়া বলেন, ইলিশকে ফালি করে কাটা শেষে ভালোভাবে লবণ দিয়ে ইলিশগুলো ড্রামে করে কয়েক মাস সংরক্ষণ করা হয়। বৈশাখ মাসে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। নোনা ইলিশের চাহিদা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট, জামালপুরে বেশি হওয়ায় মাছগুলো ওইসব অঞ্চলে পাঠানো হয়। ব্যবসায়ী হাতেম আলী সরদার বলেন, এই সামরাজ ঘাট ও বেতুয়া নতুন স্লুইসগেটঘাট থেকে প্রতি সিজনে কোটি টাকার নোনা ইলিশ বিক্রি হয়। স্থানীয় হাটবাজারে নোনা ইলিশ খুবই কম বিক্রি হলেও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোসহ চট্টগ্রামে লঞ্চ ও গাড়িতে করে পাঠানো হয়। ওইসব এলাকার ক্রেতারাই কাটা ইলিশ বা নোনা ইলিশ বেশি কিনে থাকেন। যা ১২ থেকে ১৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
মাছ কাটা শ্রমিক হরকত আলী বেপারী বলেন, একাধিক জেলে ও ঘাট শ্রমিক এই পেশায় কর্মরত। বর্ষার সিজনে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে আর তাই ব্যস্ততাও বেড়েছে আমাদের। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার বন্ধ থাকলে আমাদেরও কাজ থাকে না।
আড়তদার কামরুল ইসলাম ও শাহীন মালতিয়া বলেন, এই নোনা ইলিশ বা কাটা ইলিশ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। চরফ্যাশন উপজেলায় এটি অনেক পুরানো ঐতিহ্য। ভালোভাবে প্রক্রিয়া বা প্রচারণা করা গেলে এই ইলিশ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, কেউ কেউ তাজা ইলিশ পছন্দ করেন আবার অনেকেই কাটা ইলিশ বা নোনা ইলিশ পছন্দ করেন। বাজারে ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় ইলিশে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রান্না করা হলে আলাদা একটি স্বাদ পাওয়া যায়। চরফ্যাশনের জেলে ও ব্যবসায়ীরা নোনা ইলিশ বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা যেন ভালোভাবে প্রক্রিয়া ও সংরক্ষণ করতে পারেন এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
কেকে/ এমএস