বাংলাদেশকে বুকে লালন করে অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি প্রবাসী শিল্পীরা সঙ্গীত চর্চা করে যাচ্ছেন। সংগীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ উদ্যোগে প্রবাসী শিল্পীরা দেশিও সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে অবদান রাখছেন। তেমনি একজন শিল্পী হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী শিল্পী সামিদা চৌধুরী পপি। যিনি বাংলাদেশ কমিউনিটিতে শিল্পী সামিদা পপি নামেই বেশি পরিচিত। সামিদা চৌধুরী পপির "হৃদয়ে হৃদয়" নামে একটি এককএলবাম আছে। এছাড়া শিল্পী শশী জাফরের সাথে "হয়ত ভুলে গেছো তুমি" নামে একটি ডুয়েট এলবাম ও আছে।
খোলা কাগজের আমিরাত প্রতিনিধির সাথে আলাপচারিতায় জানিয়েছেন তার শিল্পী হওয়ার পিছনের গল্প।
খোলা কাগজ: আপনার জন্মস্থান এবং পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
সামিদা চৌধুরী: আমি সামিদা চৌধুরী পপি। জন্মস্থান ঢাকা।
আমার আব্বার নাম ওয়াদুদুল হক চৌধুরী। আব্বা ছিলেন চিত্রশিল্পী। জয়নুল আবেদীনের অনেক প্রিয় ছাত্র। আমার আব্বা, UNISPACE -এর উদ্যোগে এবং SPARRSO কর্তৃক আয়োজিত ভিয়েনাতে পোস্টার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়ে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। সেই সময়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
আমার আম্মার নাম শিরীন চৌধুরী। আম্মা পেশায় গৃহিনী হলেও অনেক ভাল গান করতেন। আমার গানের প্রথম উস্তাদ আমার আম্মা। আমরা চার বোন ও এক ভাই। আমি সবার ছোট।
খোলা কাগজ: কবে থেকে গান করছেন?
সামিদা চৌধুরী: আমি শুনেছি, যখন থেকে মুখে কথা ফোটেনি তখন থেকেই আম্মা আর বোনদের গান শুনে শুনে নিজের ভাষায় নিজের মত করে গাইতাম।
খোলা কাগজ: কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কবে আত্বপ্রকাশ করেছেন?
সামিদা চৌধুরী: খুব ছোটবেলায় একদিন মাঠে খেলছিলাম, পাড়ার মাইক এ ঘোষণা দিল ছোটদের একটি গানের প্রতিযোগিতা হবে। খেলা ফেলে দৌড়ে বাসায় গিয়ে মেঝো বোনের কাছে একটি গান শিখে ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি ও প্রথম স্থান অধিকার করে পুরস্কার নিয়ে বাসায় আসি। সেই দিন থেকেই গান করছি।
খোলা কাগজ: আপনার উস্তাদ কে ছিলেন? তাদের নাম?
সামিদা চৌধুরী: আম্মা আমার ও আমার বোনেরা প্রথম শিক্ষক। আমাদের গানে হাতেখড়ি আমার আম্মার কাছে। তারপর অনেক সংগঠনে অনেকের কাছেই শিখেছি। ছোটবেলায় আর্তনাদ নামে একটি সংগঠনে ছিলাম, সেখানে রনজু খান ভাইয়ের কাছে শিখেছি। বাফা ও নজরুল ইনস্টিটিউটে অনেক গুণিজনের কাছে গান শিখেছি। যেমন ক্লাসিক্যাল শিখেছি ওস্তাদ জোসেফ কমল রডরিস্ক ও ইয়াকুব আলী খান স্যারের কাছে। নজরুল গীতি শিখেছি সালাউদ্দিন আহমেদ স্যার, ইয়াকুব আলী খান স্যার, শানু স্যার, সুধীন দাস কাকা ও সোহরাব হোসেন চাচার কাছে।
খোলা কাগজ: আমিরাতে আসার আগে দেশে কি গান করতেন?
সামিদা চৌধুরী: জী, দেশে সবসময়ই গান করেছি। গানের মাধ্যমই আজকে আমি সবার কাছে শিল্পী হিসেবে আত্বপ্রকাশ করেছি।
খোলা কাগজ: আপনার নিজস্ব কোন একক এলবাম বা গান আছে?
সামিদা চৌধুরী: জী, আমার নিজস্ব এলবাম আছে। “হৃদয়ে হৃদয়” নামে আমার একটি একক এলবাম আছে। আর আমার ছোট মামা শিল্পী শশী জাফরের সাথে “হয়ত ভুলে গেছো তুমি” নামে একটি ডুয়েট এলবাম আছে।
খোলা কাগজ: আমিরাতে কিভাবে আসা হলো?
সামিদা চৌধুরী: বিয়ের পর স্বামীর সাথে এসেছি।
খোলা কাগজ: ছেলে-মেয়ে কতজন?
সামিদা চৌধুরী: আমার এক ছেলে।
খোলা কাগজ: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্লনা কি?
সামিদা চৌধুরী: যতদিন বাঁচবো গান গেয়ে যাব, আল্লাহ সহায় থাকলে গানের মাধ্যমেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান।
সম্মাননা গ্রহণ করছেন শিল্পী সামিদা চৌধুরী পপি
উল্লেখ্য, গানের মাধ্যমে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অর্জন করেছেন অনেক সম্মাননা সনদ। তার মধ্যে- ওয়ার্ল্ড ইসলামিক মিশন সম্মাননা সনদ, প্লানেট ইন বাস্কেট ফ্রান্স সম্মাননা সনদ, নজরুল ইনস্টিটিউট ডিপ্লোমা কোর্সে প্রতিযোগিতাগ দ্বিতীয় স্থান, বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস ২০২০, ২১ ও ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার, শিশু একাডেমি সম্মাননা সনদ, কবি নজরুল জন্মবার্ষিকী সনদ ও জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ১৯৯৫ উল্লেখ্যযোগ্য।
এছাড়া ইউএসএসআর কালচারাল ডিপার্টমেন্ট সেরা শিল্পী অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব দুবাই সেরা শিল্পী অ্যাওয়ার্ড, বিক্রমপুর সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্মাননা, আলম সংগীত একাডেমী সম্মাননা, ভাসকর শিশু কিশোর সংগঠন সম্মাননা, কৌশুমী খেলাঘর সম্মাননা পুরস্কার, স্বপ্নপুরী খেলাঘর সম্মাননা, চন্দ্রা ক্রীড়া সাংস্কৃতিক সংসদ অ্যাওয়ার্ড, হিন্দুস্থান আর্ট ও মিউজিক সোসাইটি অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ে গানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন।
শিল্পী সামিদা চৌধুরী পপি
শিল্পী সামিদা চৌধুরী পপি গানের জন্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমিরাতেও পেয়েছেন সেরা শিল্পী সম্মাননা ও এওয়ার্ড। তার মধ্যে ৫২ টিভি, এনটিভি, মাই টিভি, একাত্তর টিভি, আরটিভি, এস টিভি, জিটিভি, বাংলা টিভি, চ্যানেল আই, সার্ক জার্নালিষ্ট ফোরাম, সার্ক সাংবাদিক ফোরাম পুরস্কার ২০২৫, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ইউনিট পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতি, মিউজিক ভিশন এওয়ার্ড, দুবাই ফ্যাশন শো এওয়ার্ড, বাংলাদেশ ফল উৎসব সম্মাননা, বাংলাদেশ বইমেলা-২০২২, বাংলাদেশ কন্সুল্যেট দুবাই সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শিল্পী হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
শিল্পী সামিদা চৌধুরীর স্বপ্ন, গানের মাধ্যেম দেশের সুনাম বয়ে আনার পাশাপাশি প্রবাসের মাঠিতে থাকা আগামী প্রজন্মকে গানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। তিনি সবার কাছে দোয়া ও ভালবাসা চেয়েছেন। আজীবন গানকে ভালবেসেই কাটিয়ে দিতে চান।