ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন। দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। তবে অমীমাংসিত থেকে গেছে একাত্তরের গণহত্যা ইস্যু, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
একাত্তর ইস্যু সমাধান হয়ে গেছে বলে দাবি :
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দাবি করেছেন, একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিন সমস্যার দুবার সমাধান হয়েছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ মন্তব্য করেন ইসহাক দার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে ইসহাক দারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে তিনি বলতে চান, ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ওই সময়ের দলিলটি দুই দেশের জন্য ঐতিহাসিক। এরপর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখানে (বাংলাদেশে) এসে প্রকাশ্যে ও খোলামনে বিষয়টির সমাধান করেছেন। ফলে বিষয়টির দুবার সমাধান হয়েছে। একবার ১৯৭৪ সালে, আরেকবার ২০০০ সালের শুরুতে।
গতকাল ইসহাক দার বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করেন। পরে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। এরপর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
ইসহাকের দাবির সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ :
একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের বিষয়ে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার যে দাবি করেছেন, তার সঙ্গে একমত নন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আগামী দিনে উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবে।
গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এরপর দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা (বৈঠকে) পরস্পরের অবস্থানটা তুলে ধরেছি। আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা তিনটি বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষই বলেছি, এ বিষয়গুলোকে আমাদের সমাধান করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যাতে মসৃণভাবে এগোতে পারে, সে জন্য বিষয়গুলোকে পেছনে ফেলতে হবে। দুই পক্ষ একমত হয়েছে যে, আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলব। চেষ্টা করব যে, বিষয়গুলোতে যাতে কোনো এক পর্যায়ে কথা বলব আমরা আলাদা করে, যাতে এ বিষয়গুলোকে পেছনে ফেলতে পারি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই, হিসাবপত্র হোক, যেটা টাকা-পয়সার ব্যাপার সমাধান হোক। আমরা চাই, এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করুক, মাফ চাইবে। আমরা চাই, আটকে পড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নেবে। আমি বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরেছি।’
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই :
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি, চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) সই হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও কর্মসূচি সই হয়। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার উপস্থিত ছিলেন।
দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি সই হয়েছে।
সই হওয়া এমওইউগুলো হলো : দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন। দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস ও এপিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সঙ্গে পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) সহযোগিতা। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি (সিইপি) সই।
কেকে/ এমএস