প্রায় ২১ দিন পর দেশে ফিরেছে গ্রিসে হত্যাকাণ্ডের শিকার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার রনসী গ্রামের প্রবাসী রাজা হোসেন (২৮) মরদেহ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টায় গ্রিসের একটি বিমান ফ্লাইটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাজার মরদেহ পৌঁছায়।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে রাত সাড়ে ৯টায় শান্তিগঞ্জের পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের রনসী গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছে তার মরদেহ। রাজার মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়। রাজাকে একনজর দেখতে ভিড় জমান গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা।
শেষ দেখার পর রাত সাড়ে ১০ টায় রনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে জানাজা সম্পন্ন হয় নিহত রাজা হোসেন। জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
স্বজনরা জানান, পরিবারের স্বপ্নপূরণের আশায় ধারদেনা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে বছর দেড়েক আগে ছেলেকে গ্রিস পাঠান জলিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। আক্রশের বশবর্তী হয়ে গ্রিসে সহকর্মীদের হাতে খুন হয়েছেন রাজা হোসেন।
রাজা হোসেনের হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
নিহত রাজার আত্মীয় রনসী গ্রামের সালিশ ব্যক্তিত্ব লুৎফুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর শান্তিগঞ্জের প্রবাসীদের সংগঠনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিহত রাজা মিয়ার মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। লাশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তবুও তার লাশ দেশে আসায় মা-বাবার মনে শান্তি পাবে। তার দাফন করা যাবে, কবর জিয়ারত করা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজা হোসেন ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সহায়-সম্বল বিক্রি ও ধারদেনা করে রাজাকে প্রবাসে পাঠিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু সেখানে ঘাতকরা ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজাকে হত্যা করেছে। আমরা সুবিচার চাই। যেকোনো ভাবে ঘাতকদের শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়। অন্তত তার মা-বাবা যেন সান্ত্বনা পায় যে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।’
সন্তান হারানো মা নিবারুন নেছা ও বাব আব্দুল কাদির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রাজা মিয়া ছিল আমাদের পরিবারের মূল খুঁটি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার ছেলেকে ধারদেনা করে প্রবাসে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে পুরোনো সহকর্মীদের পরিবর্তে আমার ছেলে ফোরম্যান পদে দায়িত্ব পাওয়ায় তার সহকর্মীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা খুঁনিদের ফাঁসি চাই।’
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাটি গ্রিসে হয়েছে মামলা সেখানেও হবে। আমাদের পক্ষ থেকে বিধি মোতাবেক যা যা সহযোগিতা করা প্রয়োজন আমরা তা করব।’
কেকে/এএস