সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ঋণের ফাঁদে পড়ে বাড়ছে মৃত্যু
রোকন উদ্দিন
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৯ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

রাজশাহীতে নিয়মিত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ও অভাবের তাড়নায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন মিনারুল ইসলাম নামের এক যুবক। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া গস ১২ আগস্ট ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কুমিল্লায় আত্মহত্যা করেছেন মা-মেয়ে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে একাধিক মানুষের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। যা নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্রঋণ সহজলভ্য হওয়ায় ঝুঁকি বিবেচনা না করেই অনেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু সেই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে খুব একটা ভাবেন না সাধারণ মানুষ। ফলে যখন কিস্তি পরিশোধের সময় হয়, তখন অনেকেই তা দিতে ব্যর্থ হন। এ ক্ষত্রে এক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ করেন অনেকে। এভাবে নিজেদের ভুলে ঋণের এক দুষ্টচক্রে পড়ে যান তারা। এক সময় সময় তাদের মাথার ওপর বিশাল ঋণের বোঝ চেপে বসে। যার চাপ নিতে পেরে অনেতেই আত্মহননের পথ বেছে নেন। এ ক্ষেত্রে বুঝেশুনে ঋণ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যাতে করে পরবর্তিতে দুঃজনক পরিস্থিতি এড়ানো যায়। 

সে রকমই একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বামুনশিকড় এলাকায়। ঋণের চাপ নিতে না পেরে মৃত্যুর মুখে পতিত হন একই পরিবারের চারজন। 

নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম (৩৫), স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮) এবং তাদের ছেলে মাহিন (১৩) ও মিথিলা (২)। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যাতে ঋণের কথা বলা হয়েছে। 

পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিনারুল আগে এক সময় জুয়া খেলতেন। পরে ছেড়ে দেন। এ জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। দেড় বছর আগে বাবা রুস্তম আলী ধানিজমি বিক্রি করে ঋণের একটা অংশ দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও তার দুই লাখ টাকা ঋণ ছিল। এ ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাকে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু কিস্তি চালাতে পারছিলেন না মিনারুল। বাবাকে মিনারুল আর কিছু জমি বিক্রি করে পুরো টাকা পরিশোধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু বাবা জমি বিক্রি করতে চাননি। এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে মিনারুল কথা বলা বন্ধ করে দেন। এমনকি ছেলেমেয়েদেরও মিশতে দিতেন না। 

জানা গেছে, মিনারুলের মেয়ে মিথিলা মাছ পছন্দ করত। গতকাল সকালে মিনারুলের বাবা খড়খড়ি বাইপাস হাট থেকে মাছ কিনে আনেন। এ জন্য দাদি আঞ্জুয়ারা বেগম নাতনিকে ডাকতে যান। অনেক ডাকাডাকির পরও কেউ সাড়া দিচ্ছিলেন না। সকাল পৌনে ৯টার দিকে লাগোয়া ঘরের পাশে সিলিংয়ের ওপর দিয়ে ছেলেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা বাড়িতে আসেন। স্থানীয় পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেদ আলী পুলিশকে ফোন দেন। পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা খোলে। 

দুই পৃষ্ঠার চিরকুটের ওপর লেখা ছিল, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম এই কারণে যে, আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলেমেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে। কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া দিতেই পারব না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্য কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক লোকের কাছে ছোট হয়েছে। আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই, সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।’

স্থানীয় পারিলা ইউপির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ আলী বলেন, তিন দিন আগে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনেছেন। বর্ষাকালে কাজকর্ম ছিল না। এ জন্য চাপে ছিলেন। 

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানার পরই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হবে। মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটা চিঠি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটা মিনারুলের লেখা। এতে ঋণের কথা বলা হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুস্পষ্টভাবে বলা যাবে এটা কার লেখা। 

ঋণের চাপে মা-মেয়ের আত্মহত্যা

কুমিল্লায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে মা ও মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

মৃতরা হলেন কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের মৃত জীবন চন্দ্র পালের স্ত্রী নমিতা রানী পাল (৪২) এবং তাদের মেয়ে তন্বী রানী পাল (১৮)। 

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নমিতা রানী পাল দেবপুরের একটি মিলে চাকরি করতেন। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে ৫ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর মেয়েকে নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করতেন। চাকরি ছাড়ার কিছুদিনের মাথায় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ নেন। তা ছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকেও কিস্তির মাধ্যমে ঋণগ্রহণ করেন। স্বামীহারা নমিতা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ইঁদুর মারার ওষুধ খেয়ে মা ও মেয়ে আত্মহত্যা করে।

এ বিষয়ে বুড়িচং থানার দেবপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল্লাহ প্রধান বলেন, দুপুরে নামাজের পর আমরা খবরটি জানতে পেরে ঘটনা চলে আসে। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা ঘরটি তল্লাশি করে ইঁদুর মারা কিছু ট্যাবলেটের পাতা সংগ্রহ করতে পেরেছে। 

এ ছাড়া গত ১৯ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঋণের দায়ে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি কীটনাশকপানে আত্মহত্যা করেছেন। একইদিন পাবনার সাঁথিয়ায় ঋনের দায়ে রহম আলী নামের এক ডিম বিক্রেতা আত্মহত্যা করেন।  

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শীর্ষ মানবপাচার চক্রের মূল হোতা আটক
বিপর্যস্ত বাংলাদেশের সামনে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা
ভাইরাল গরুচোর সবুজসহ গ্রেফতার ৫
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস আজ
যখন জনগণ জানে না, তখন গণভোট অর্থহীন

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
ইমপোর্টার-এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close