চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি চৌধুরী রাশেদুল আবেদিন একটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়েই রাত্রীযাপন করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি সভাপতি থাকার সুবাদে এবং সাবেক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলের চারতলা ভবনের একটি কক্ষ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে আসছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ওই কক্ষে তিনি বিছানা পেতে রাত কাটান এবং দিনের বেলায় ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখেন। সেখানে বসেই তিনি মদ্যপান করতেন যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য চরম অপমানজনক আচরণ। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলে অতীতে সভাপতির দায়িত্বে থাকার কারণে তিনি নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন। আমরা কিছু বললে উল্টো আমাদের ওপর চিৎকার-চেঁচামেচি করেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, ‘রাশেদ চৌধুরী মাঝেমধ্যে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সাথে উঁচু স্বরে কথা বলেন। হঠাৎ করে তিনি উপরের কক্ষ থেকে নেমে এসে ক্লাসে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। এতে আমরা ভয় পাই এবং মনোযোগ নষ্ট হয়। যা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে।’
এ ঘটনায় অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন সাবেক সভাপতির এমন আচরণে স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সচেতন মহলের প্রতিনিধি সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, ‘এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে, তাদের উচিত অবিলম্বে ওই কক্ষ শিক্ষামূলক কাজে ফিরিয়ে আনা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লাকী বড়ুয়া বলেন, ‘তিনি স্কুলের সাবেক সভাপতি থাকাকালীন থেকে কক্ষটি নিজের দখলে রেখেছেন। মাঝে মধ্যে শ্রেণি কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের সাথে চেঁচামেচি করতেন। তিনি স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে বিষয়টি আমরা কাউকে জানাতে পারিনি। হাইস্কুলের ঘটনার পর আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠদান নয় বরং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জায়গা। এ ধরনের অনৈতিক দখলদারি ও অপব্যবহার সেই পরিবেশকে নষ্ট করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। ইউএনও মহোদয়ের হস্তক্ষেপে সুরহা করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গাফিলতির ফল। কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা সভাপতির স্কুল কক্ষ ব্যবহারের অধিকার নেই। প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/এজে