সরকারের প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতার অভাবে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন অনেকটাই নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। একই সঙ্গে তিনি বলেন,সরকারের ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে গণ অভ্যুত্থানউত্তর বাংলাদেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন বৃদ্ধি পেয়েছে, উগ্রবাদ যায়গা করে নিয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে বিপ্লবী যুব সংহতির উদ্যোগে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানে তরুন যুবাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির খতিয়ান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে অতীতে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির কোনো যোদ্ধারা নিজেদেরকে এভাবে বিতর্কিত করেননি। এ কারণে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া লাখো তরুণ যুবাদের মধ্যে এক ধরনের নৈরাশ্য রাজনীতি বিমুখতা তৈরী হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের বার্তা নিজেদের দেহে ধারণ করতে পারেনি। এ কারণে বারেবারে তারা পথ হারিয়েছে, অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজেদেরকে বিতর্কে জড়িয়ে ফেলেছে। তাদের নানা পদক্ষেপে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এখন সরকারকে যাবতীয় বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ প্রশস্ত করার আহ্বান জানান।
এ সময় সাইফুল হক গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তরুণ যুবাদেরকে রাজপথে জেগে থাকার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের নিজেদেরও গুনগত পরিবর্তন বেশী জরুরী। তা নাহলে তারা সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা ধারণ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হাসিনাকে রক্ষা করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের পর লোভে পড়ে অনেকে পথ হারিয়েছে। ছাত্র তরুণদেরকে অনেকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। তরুণদেরকে এদের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া কিশোর গ্যাং এর পিছনে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কিনা খুঁজে বের করা দরকার।
সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি যে বালির বাধ তৈরী করেছিল যুবশক্তি তা গুড়িয়ে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের রাস্তা তৈরী করেছে। গণঅভ্যুত্থানে শ্রমিকশ্রেণী বেশী জীবন দিলেও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।
দৈনিক আমাদের সময় এর নির্বাহী সম্পাদক এহসান মাহমুদ বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। গত এক বছরে ৮০ শতাংশ আন্দোলন হয়েছে কর্মসংস্থানের দাবিতে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরও ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে সর্বজনের কৃতিত্বকেও ছিনতাই করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ থাকা স্বত্বেও সবাইকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান বলেন, শোষণ বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে যুব সামাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিপ্লবী যুব সংহতির আহ্বায়ক যুবনেতা বাবর চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্যসচিব মীর রেজাউল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাৎউল্লাহ টুটুল, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোরশেদ মামুন, জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ, নাগরিক যুব ঐক্যের আহ্বায়ক মাহফুজ খান, বিপ্লবী যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য জামিরুল রহমান ডালিম, আউয়াল মাহমুদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় যুব সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে উচ্চকিত তরুন যুবাদের স্বপ্ন আকাঙ্খা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা। দেশের যুব সমাজকে তাদের মানবিক জীবন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে।
আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই-আগস্ট ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কেকে/ এমএস