ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের রাজীব সাহা একসময় ছিলেন সাধারণ সারের খুচরা বিক্রেতা। কিন্তু তৎকালীন সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলামের ভাগিনা জনি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় কয়েক বছরের মধ্যেই পাল্টে যায় তার জীবনচিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সার, ধান ও চালের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রাজীব সাহা গড়ে তোলেন একটি প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের প্রভাব বিস্তৃত ছিল বাঞ্ছারামপুর, হোমনা, আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে শুরু করে সিলেট অঞ্চলের সরকারি খাদ্য প্রকল্প পর্যন্ত।
উজানচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক পদে থেকে তিনি ‘সজীব এগ্রো ফুড’ নামে চাল বাজারজাত করেন। সরকারি মোটা চাল মেশিনের মাধ্যমে সরু করে মিনিকেট বলে চালিয়ে দেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তার রয়েছে ৩ শ টন চাল মজুদের অনুমতি। কিন্তু সেটি ১৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করে দেওয়ার সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি সেটি না করে মাসের পর মাস গুদামজাত করে দাম বৃদ্ধি ও কারসাজি করে বিক্রি করেন বলে জানা গেছে।
তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে—এই প্রতিষ্ঠানের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই, এবং রোববার (১০ আগস্ট) লাইসেন্স না থাকার কথা স্বীকারও করেন। চালের বস্তায় ‘সজীব এগ্রো ফুড, কুষ্টিয়া’ ও নাটোর লেখা থাকলেও এসব চাল আসে সিরাজগঞ্জ ও আশুগঞ্জের মিল থেকে। কুষ্টিয়ার নামের আড়ালে চাল বিক্রি করে নেন বেশি দাম, আর সেই অতিরিক্ত মুনাফা যায় ব্যক্তিগত পকেটে।
একই চালের বস্তায় দুই ঠিকানা। ছবি প্রতিনিধি
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের প্রক্রিয়াতেও ছিল নানা অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে—ধান কেনার পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজীব সাহা ও জনি চেয়ারম্যান। এছাড়াও খাদ্য কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে রাজীব সাহার মালিকানায় রয়েছে বাজার এলাকায় ১০ শতক জমির ওপর বহুতল ভবন, নারায়ণগঞ্জ বন্দরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং বিপুল অঘোষিত সম্পদ। নারায়নগঞ্জের পৌরসভার সামনে রয়েছে তার বিশাল চালের আড়ৎ।
খুচরা সার বিক্রেতা থেকে বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি টাকার মালিক এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা রাজিব সাহার সাথে মুঠোফোনে আজ (১০ আগস্ট) কথা হলে বলেন, ‘ভাই বাঞ্ছারামপুরের অনেকে চাল ব্যবসায় ২ নাম্বারি করে। আমি করলে দোষ কি? আমি স্বীকার করছি ‘সজীব এগ্রো’ নামে ব্যবসা করলেও তার কোনো লাইসেন্স নাই। মোটা চাল সরু করে আগে আগে বিক্রি করতাম। এখন করিনা। আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক হলেও জনি চেয়ারম্যান আমাকে তেমন কোনো বড় সুযোগ দেয়নি।
উজানচর সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর আমি রাজিবের চেহারা দেখিনি। তার কোনো অনিয়মের সাথে আমি জড়িত নই। লাইসেন্স থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সে এখন অস্বীকার করছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—কোথা থেকে এলো এ বিপুল সম্পদ? তাদের দাবি—জনগণের অর্থ লুটের এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।