অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজানের প্রবল ঢলে তিস্তা নদীর জলস্তর ফের দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি।
রোববার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে পানির এ প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ছিল বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে। সকাল ৯টার দিকে তা বিপৎসীমায় পৌঁছে যায় এবং দুপুর নাগাদ ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। এতে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পানির উচ্চতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবুও পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্লাবনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘মাত্র দুই দিন আগে পানি নেমেছিল। ভেবেছিলাম এবার হয়তো স্বস্তি পাবো। কিন্তু আজ আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে পানি ওঠানামা করলে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। সরকার যদি দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তবে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।’
এদিকে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল আলী বলেন, ‘সকাল থেকে হঠাৎ করেই পানি বাড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে পানি ঢুকে চলে গিয়েছিল, এখন আবার বাড়ছে। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় জানান, ‘দুপুর ১২টার দিকে পানির উচ্চতা আরো কিছুটা বাড়েছে, তবে সন্ধ্যার পর থেকে তা কমতে পারে বলে ধারণা করছি। কিছু নিচু এলাকায় ইতোমধ্যে পানি ঢুকেছে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সন্ধ্যার পর পানি কতটা বাড়বে বা কমবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২৯ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছিল।
কেকে/ এমএস