ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার নদীতীরবর্তী পরিবারগুলো। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। কৃষক পরিবারগুলো হারাচ্ছে জীবিকা, ঘরবাড়ি এবং বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও।
ভাঙনের ভয়াল থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দেবনাথপাড়া, কুরুল, মেঘারাম, ছয়মাথা ও চর বুদারু, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমন্ডল, চর গোড়কমন্ডল, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকের বাজার এবং সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব এলাকা।
লালমনিরহাটের দেবনাথপাড়া গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন (৬৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শেষ সম্বল চার বিঘা জমি গেল সপ্তাহেই ধরলার পেটে চলে গেছে। এর আগে নদী কেড়ে নিয়েছে আরও ১২ বিঘা। এখন শুধু আট শতকের ওপর বসতভিটা টুকু বাকি। কীভাবে চলবে আমাদের সাতজনের সংসার, আল্লাহই জানেন।
একই গ্রামের ভোলানাথ দেবনাথ (৬০) বলেন, ধরলার ভাঙনে গেল সপ্তাহেই পাঁচ বিঘা জমি চলে গেছে। বাকি জমিগুলোও এখন হুমকির মুখে। আমাদের সংসার একসময় স্বচ্ছল ছিল। এখন রাস্তায় উঠে আসার উপক্রম।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জোনাব আলী বলেন, দেবনাথপাড়া এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। আরো প্রায় ৩০০ বিঘা জমি ঝুঁকিপূর্ণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু পরিদর্শনে আসছে, কিন্তু প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। জিও ব্যাগ ফেলানো গেলে অনেক জমি রক্ষা পেত।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে।
ফুলবাড়ীর চর গোড়কমন্ডল এলাকার কৃষক আলা-বকস (৬৫) বলেন, আমার দুই বিঘা জমি আর ছয় শতাংশ বসতভিটা—সব গেছে নদীতে। এখন রাস্তার পাশে কোনোমতে দুইটা ঘর বানিয়ে বাস করছি। জমি কেনার বা ঘর করার সামর্থ্য নেই।
একই এলাকার মাহমুদা বেগম (৩৪) বলেন, নদী এখন ঘরের একেবারে পেছনে চলে এসেছে। যেকোনো সময় বসতভিটাও গিলে ফেলবে। আগে তিন বিঘা জমি ছিলো, সেটাও গেছে।
চর গোড়কমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, মুজিব কেল্লার ভবনসহ দুই শতাধিক বসতভিটা। এক সপ্তাহে নদীতে গেছে ১৫টি ঘরবাড়ি এবং শতাধিক বিঘা আবাদি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, গত বছর চর গোড়কমন্ডলে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এখন আর কোনো ব্যাগ মজুত নেই। নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
কেকে/ এমএস