মৌলভীবাজারের বেরীরপাড় পয়েন্টে পথসভা। ছবি : প্রতিনিধি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচনকে জনগণ গ্রহণ করবে না। ফলে বিচার এবং সংস্কারে যতটুকু আমরা এগিয়েছি তার পক্ষে ঐকমত্য হয়ে আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কার জরুরি।
শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে দেশব্যাপী এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসাবে মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্নকে নির্বাচনের সাথে একমাত্র দাবিতে রুপান্তর করে তোলা হয়েছে। আমরা বলেছি আমরা নির্বাচন চাই, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করা শক্তি, আমরা ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করা শক্তি। কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের সংস্কার ও নতুন সংবিধান ছাড়া দেশে নির্বাচন করাটা কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারকে আমরা বলেছি আমাদের একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকারের কথা থাকবে। বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক ১৯৪৭ এর আজাদির লড়াই, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে। এই সংবিধানে সকল জাতি ও ধর্মের সমানাধিকার থাকবে। বাহাত্তরের সংবিধান মানেই মুজিববাদী সংবিধান। দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে সেই সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য আমাদের দাবির বিপক্ষে রাজপথে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি। অথচ ’৭২ এর সংবিধান ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, স্বাধীনতা সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করে মুজিববাদী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত। আমরা সেই চক্রান্তের মধ্যে ৫৪ বছর ছিলাম। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই চক্রান্ত থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।
মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে জুলাই পদযাত্রায় নাহিদ ইসলাম
এর আগে মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা বের হয়। মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলমের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসনে, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাস, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদরে (বাগছাস) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মারুফ আল হামিদ, জাকারিয়া ইমন, মৌলভীবাজার এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক এহসান জাকারিয়া প্রমুখ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সেই জুলাই-আগস্ট থেকে এই জুলাই আগস্ট পর্যন্ত একবছর হয়ে গেছে। আমরা বলেছিলাম একটি নতুন বাংলাদেশ লাগবে, একটি নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরনো সিস্টেমে, পুরনো আইনে আমরা আর এই বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেবো না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে দালাল শক্তি আবারো চেষ্টা করছে পুরোনো সিস্টেমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। বিচার, সংস্কার এবং একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই। তরুণরা কর্মসংস্থানের দাবিতে রাজপথে নেমেছিল। বাংলাদেশের জনগণ অর্থনৈতিক বৈষম্যবিলোপের দাবি, মানবিক মর্যাদা ও নিজেদের স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নেমেছিল। আমরা সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পেলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের দাবি এখনও পুরণ করতে পারি নাই।
এনসিপির পথসভায় নেতাকর্মীরা
পথসভায় এনসিপির আহ্বাক নাহিদ ইসলাম মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, মৌলভীবাজারে বাংলাদেশের সর্বাধিক চা বাগান আছে। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারের যে সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার আমরা কখনো করতে পারি নাই।
তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকরা রয়েছেন। কয়েকদিন পরপরই ন্যায্য মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলন করেন। শ্রীলঙ্কায় চা শ্রমিকরা সাড়ে ৫’শ টাকা মজুরি পায়। ভারতে ৪শ টাকার মতো মজুরি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে চা শ্রমিকরা ১৭৯ টাকা মজুরি পায়। ১৭৯ টাকায় একজন শ্রমিক কিভাবে তার দিনযাপন করবে। কিভাবে স্বাস্থ্য ,শিক্ষা ও পরিবারের ভরণপোষণ করবে। আমরা চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, মৌলভীবজারে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী সংস্কৃতি রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন উন্নয়নে মৌলভীবাজার এখনো পিছিয়ে।
আলেম উলামারাও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক আলেম উলামারাও ইনসাফের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছেন। জুলাই আন্দোলনে আলেমদের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় নাগরিক পার্টি আলেমদের সাথে আছে।
এর আগে, সকাল ১০টা থেকেইে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জেলার ৭ উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যোগ দেন। সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মৌলভীবাজার শহর। এসময় মিছিলে তারা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ, মুজিববাদ মুর্দাবাদ, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ¯স্লোগান নিয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সমবেত হন। এখান থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আনুষ্ঠানিক জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি উদ্বোধন করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বেরীরপাড় পয়েন্টে এসে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বক্তব্য দেন।
বেলা ১টার দিকে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের একটি মিলনায়তনে চা শ্রমিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন এনসসিপি নেতারা।
এদিকে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্ত্বরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত পথসভা করার কথা থাকলেও এই সভাটি স্থগিত করা হয়। যার ফলে স্থানীয় ছাত্রজনতার মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে শহরের চৌমুনা হয়ে কিশোরগঞ্জ পথসভায় যাবার পথে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এর গাড়ি ঘিরে ধরেন উৎসুক জনতা। পরে বাধ্য হয়েই গাড়ি থেকে নেমে চৌমুহনা সড়কে স্থানীয় ছাত্রজনতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও সংক্ষিপ্ত কথা এবং মিছিলে অংশ নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এনসিপির পথযাত্রাকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন সড়ক ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। র্যার, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙাখলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল ছোখে পড়ার মতো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সমাপ্ত হয় এনসিপির পথযাত্রা।