নিজেকে পরিচয় দিতেন এমবিবিএসসহ নানা উচ্চতর ডিগ্রিধারী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। রোগীদের সামনে ছিলেন একজন দক্ষ ও পরিশ্রুত চিকিৎসক, কথাবার্তায় ফুটে উঠছে উঁচু সারির লোক, অথচ বাস্তবে তিনি ছিলেন প্রতারণার ছদ্মবেশে মোড়া এক ভুয়া ডাক্তার। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রোগী দেখে বেড়ালেও শেষ রক্ষা হলো না তার।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার এলাকার 'মোল্লা মেডিকেল হল' নামক একটি ফার্মেসি থেকে আবু ফরহাদ মাহবুব (৪০) নামে ওই ভুয়া চিকিৎসককে হাতেনাতে আটক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া।
সেখানে তিনি রোগী দেখছিলেন একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের পরিচয়ে। কিন্তু তার আসল পরিচয় ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে অন্য একজন আসল চিকিৎসকের বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সনদ ব্যবহার করেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানের সময় ফার্মেসির ভিতর থেকে আবু ফরহাদের ব্যবহৃত দুই শতাধিক প্রেসক্রিপশন ফাইল ও শতাধিক চিকিৎসা-সংক্রান্ত লিফলেট জব্দ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই আবু ফরহাদ বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখতেন এবং যখনই কেউ তার সনদ দেখতে চাইতো, তিনি নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যেতেন। কখনো ছুটি নিতেন, আবার কখনো হাসপাতালই পাল্টে ফেলতেন।
ভুক্তভোগী এক রোগী জানান, আগেও তাকে দেখিয়েছি, কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি তাই আজও এসেছিলাম কিন্তু সে ভুয়া ডাক্তার জানতাম না।
স্থানীয় এহসান ইসলাম জানান, কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় আরো বহু ভুয়া চিকিৎসক এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নজরদারি আরো জোরদার করা দরকার। হাসপাতাল ও ফার্মেসি দিয়ে একটি নীতিমালা নিয়ে আসা দরকার।
এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, কেরানীগঞ্জ একটি জনবহুল এলাকা। এখানে অনেকেই অনুমোদনহীনভাবে ফার্মেসি খুলে ভুয়া ডাক্তার বসিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এমন একটি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আজ এক ভুয়া চিকিৎসককে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আটক ব্যক্তি নিজে কোনো চিকিৎসক নন, বরং ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। আমরা তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছি। সেই সঙ্গে ফার্মেসির মালিককে ভবিষ্যতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া আর কোনো ডাক্তার বসাতে নিষেধ করা হয়েছে।
সচেতন মহল মনে করেন, একজন ভুয়া চিকিৎসকের এমন প্রতারণা শুধু রোগীর অর্থ নয়, জীবনের ঝুঁকিও বাড়ায়। এ ধরনের প্রতারণা রোধে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও জনসচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
কেকে/এআর