স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত একটি সেতু পরিবর্তন এনেছে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গ্রামীণ অর্থনীতির। দুর্ভোগ মুছে দিয়েছে দশটি গ্রামের ২০ হাজারের বেশি মানুষের। সেতুটি রত্নাই নদীর ওপর। এটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দুড়াকুটি-মেঘারাম সড়কে।
স্থানীয়রা জানান, আগে বর্ষার সময় রত্নাই নদী পাড়ি দিতে হতো নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে ভরসা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। ঘণ্টা পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো ইউনিয়ন পরিষদ, দুড়াকুটি হাটসহ জেলা সদরের গন্তব্যে পৌঁছতে। এখন এক মিনিটের পথ। এ পরিবর্তন এনেছে ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রশস্তের সেতুটি।
মেঘারাম গ্রামের কৃষক নাজির হোসেন জানান, আগে চলাচল ব্যবস্থায় আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এলজিইডির সেতুটি আমাদের গ্রামে অনেক পরিবর্তন এনেছে।’ ‘রত্নাই নদীর ওপর সেতু পেতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
ইটাপোতা গ্রামের ভ্যানচালক মজিদুল ইসলাম জানান, সেতুটি নির্মাণের আগে আমাদের জীবন ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। কয়েক মাইল পথঘুরে আমাদেরকে গন্তব্যে যেতে হতো। এতে সময়, শ্রম ও অর্থ খরচ হতো। এখন খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছি। সেতুর ওপর দিয়ে ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি।
দুড়াকুটি গ্রামের মুদি দোকানদার সুরত আলী জানান, এখন সমস্যা হচ্ছে সেতুর পানি নিষ্কাশন ঠিকঠাক হচ্ছে না। সেতুর সাথে পানির লাইন নিয়মিত ওয়াশ না করায় এ সমস্যা। এ ছাড়া সেতুর নির্মাণকাজ খুবই মজবুত হয়েছে।
এলজিইডি অফিস জানায়, ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় নির্মিত সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে। ঠিকাদার ছিলেন প্রয়াত গোলাম রব্বানী। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সময়মতো সেতুর কাজ সম্পন্ন হচ্ছিল না। বিপাকে পড়ে যান এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। হতাশাগ্রস্ত হন স্থানীয়রা।
নানা জটিলতার পর অবশেষে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সংযোগ সড়ক নির্মাণে। জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সেতু নির্মাণের নকশা করা হয়েছিল। সেতু সংলগ্ন জমি পেতে চরম বেগ পেতে হয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে। এজন্য মিলেনি বাড়তি বরাদ্দের। মুল বরাদ্দের অর্থে জমির জটিলতা নিরসন করতে সময় লেগে যায়।
নির্মাণ করা হয় সংযোগ সড়ক। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল শুরু হয় স্থানীয়দের। এখন ২৪ ঘণ্টায় সেতুর ওপর দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান জানান, রত্নাই নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে প্রকৌশলীদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ঠিকাদারের সমস্যার কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেতুটির নির্মাণকাজ ধীরগতিতে হওয়ায় কাজের মান উন্নত হয়েছে। সেতুর পানি নিষ্কাশন পাইপগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হবে।
কেকে/এএম