পরপারের দাফন সেবায় নিজেকে সঁপে দিয়ে যেন ধর্মভীরুতার প্রমাণ করলেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার কাইয়ুম হোসেন। মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করে নীলফামারীর নিভৃত পল্লি কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেরভেরী গ্রামে গড়ে তুলেছেন তার মানবিক দাফন সেবা কার্যক্রম। সকল অসহায় মানুষের দাফন কার্যক্রমের জন্য ৬৫ শতক জমি দান করেছেন দাফন সেবার জন্য। সাথে গড়ে তুলেছেন দর্শনীয় একটি মসজিদ।
নীলফামারীর টেংগনমারী-বড়ভিটা সড়কে ভেরভেরী গ্রামে প্রায় ৯০ শতক জমিতে গড়ে উঠেছে ধাইজান বায়তুল হেরা জামে মসজিদ ও দাফন সেবার জন্য কবরস্থান। কোনো মুসলিম পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান না থাকলে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফনের একমাত্র ঠিকানা হলো তার ‘পরপারে দাফন সেবার জন্য কবরস্থান। জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী থেকে পূর্বদিকে পৌনে এক কিলোমিটার দুরে এটি অবস্থিত। দাফনের কাপড়সহ সব কিছুই বহন করেন সাদা মনের মানুষ কাউয়ুম হোসেন। ০১৮৭৮-৫৯০৭৯০ এ নম্বরে ভিডিও কলে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক দাফন সেবার সকল কার্যক্রম করেন তিনি। ৬৫ শতক জমি কবরস্থানের জন্য দান করেছেন। সাথেই রয়েছে, ২ হাজার ৬ শত বর্গফুট বিশিষ্ট একটি আধুনিক দর্শনীয় মসজিদ। ৫ তলার ভিত্তি দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ করেছেন। এই কাজে হিতাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজন পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে কাইয়ুম জানান। এলাকার মানুষ এ মসজিদটির মুসল্লি।
মসজিদের পাশে কাইয়ুম গড়ে তুলেছেন, কল্পিত ‘নানুবাড়ী’ নামে একটি মাথা গোজার ঠাঁই। ঢাকার শনির আখড়ায় পৌত্রিকসূত্রে বসবাস। কাইয়ুম বলেন, গ্রামে কোনো বাড়ি না থাকায় সন্তানদের আবদারে গ্রামের ঠিকানা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এ এলাকা। বাসার পাশেই রিকশা গ্যারেজে যাতায়াত করা নীলফামারী এলাকার রিকশা চালকদের সাথে পরিচয় হয় কাইয়ুমের। সখ্যতাও গড়ে উঠে। তাদের মাধ্যমেই এ এলাকায় গ্রামের বাড়ি করার জন্য প্রায় ৯০ শতক জমি কিনে ফেলেন। শখ জাগে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করা। দারিদ্র প্রীত জনপদের দুর্দশা দেখে আগে কবরস্থান ও মসজিদ গড়ে তোলেন। পরে ‘নানুবাড়ী’ নামে এ স্থাপনাটি করেন। ঢাকায় ঠিকাদারি ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করা কাইয়ুম ইট-পাথরের শহরে যখন হাঁফিয়ে উঠেন। তখন স্বস্তির খোঁজে স্ত্রী রোকেয়া হোসেনসহ ওই কল্পিত ‘নানুবাড়ীতে’ উঠেন। এ এলাকার দিনমজুর হামিদুল বলেন, প্রতি ঈদে কাইয়ুম সাহেবেরা ওই বাড়িতে আসার সময় পাড়ার খেটে খাওয়া নারী, পুরুষ ও তাদের সন্তানদের জন্য ঈদের পোষাক নিয়ে আসেন।
পুটিমারী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহেদুল ইসলাম বলেন, কাইয়ুম হোসেন একজন মানবিক লোক। এলাকার অসহায় মানুষের দাফন সেবায় সঁপে দিয়েছেন তিনি। কিশোরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে’র তিনি একজন নিয়মিত ডোনার। সব ভালো কাজেই তাকে পাওয়া যায়।
কেকে/ এমএস