জয়পুরহাটের কালাইয়ে হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে শিমুলতলী এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
রোববার (২৯ জুন) বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চাষি-ব্যবসায়ীর যৌথ ব্যানারে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা হিমাগারের বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করে পূর্বের ভাড়া নিয়ে সংরক্ষিত আলু ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন ভিড় জমাতে থাকে। প্রায় আধাঘন্টা ধরে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
খবর পেয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে হিমাগার কর্তৃপক্ষদের সাথে আলাপ করে পূর্বের ভাড়া প্রতি বস্তা ৩৫০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচী তুলে নেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ‘বাজারে আলুর দাম কম, বৃদ্ধি ভাড়া আদায় করাতে তাদের বিপদে ফেলা হয়েছে। তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা জানান, এ বছর আলু উৎপাদনের খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। উপাদান করতে গিয়ে খরচ আগের তুলনায় অনেক বেশি পড়েছে। এমনিতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করে আলু বিক্রি করলে মুলধনও হারাতে হবে।’
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘গত বছর ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু সংরক্ষণের ভাড়া ছিল ২৮০ টাকা। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ টাকা।
কৃষকরা বলছেন, হিমাগার মালিকরা পরিকল্পিতভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে আদায় করছেন। এর আগেও ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা হয়েছে। তখন মালিকরা মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তারা এখন বৃদ্ধি ভাড়াই আদায় করছেন।’
জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগার রয়েছে। এর মধ্যে কালাই উপজেলায় ১১টি। আলুচাষি আব্দুল হান্নান বলেন, ১১টি হিমাগারে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। পূর্বের তুলনায় ৬৫ কেজির এক বস্তা আলুতে এই মৌসুমে ১৭০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। তাহলে দেড় লাখ মেট্রিক টনের ওপর কত টাকা বেশি নেবেন আপনরাই বলেন? এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
আলু ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি তাদের আরো বিপদে ফেলছে। তাদের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে। হিমাগার মালিকরা নিজেদের স্বার্থে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। কথায় বলে ‘কাঁটা ঘায়ে লবনের ছিটা দিয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, হিমাগার ভাড়া বাদেই ৬৫ কেজি আলু, বস্তা, সুতলি, লেবার ও কেয়ারিং মিলে এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে খরচ পড়েছে ১১০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা। সেই এক বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এমনিতেই বস্তা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। তার ওপর ভাড়ার টাকা তো আছেই।
কৃষক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বৃদ্ধি ভাড়া আদায় সরাসরি কৃষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ইউএনও এসে মালিকদের সঙ্গে কথা ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে। এতে আমরা খুশি।
বাসযাত্রী হালিমা বেগম বলেন, আধাঘন্টা ধরে এ রোদে গাড়িতে বসে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে। বাচ্চাটা অস্থির হয়ে গেছে। তবে হিমাগার ভাড়া কমে গেছে শুনে স্বস্তি পেলাম।
আরবি প্যাসালাইস্ট কোল্ড স্টেরেজে এমডি প্রদিব কুমার বলেন, বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের আলোকেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়নি। কৃষক পর্যায়ে ৬৫ কেজির বস্তা ৪১০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ৪২০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বস্তা ৩৫০ টাকা করে নেওয়া হবে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আলু সংরক্ষণে হিমাগারগুলো বেশি ভাড়া আদায় করছেন এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা গত বৃহস্পতিবার হিমাগার মালিকদের সাথে সভা করেছি।
গত শনিবার তারা ভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানাতে চেয়ে আর জানাননি। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আজ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আবার হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বস্তা প্রতি ৩৫০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এরপরও যদি বেশি ভাড়া আদায় করেন তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/ এমএস