লেখালেখির জগতে তিনি নিভৃতে কাজ করেন, কিন্তু পাঠকের মনে তার শব্দগুচ্ছ রেখে যায় গভীর ছাপ। কবি, কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক—আবুবকর গিয়াসুদ্দীন। জন্ম বরিশালের চাখারে। বাবা কবি ও গদ্যকার নূরুদ্দীন আহমদ। শৈশব থেকেই শিল্পীমন নিয়ে বেড়ে ওঠা।
ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির শুরু। পড়াশোনা শেষে পাড়ি জমান নিউ ইয়র্কে। সেখানেও থেমে থাকেনি সৃজন। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থাকলেও মন দেন সাহিত্যচর্চায়।
এ পর্যন্ত তার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে—কবিতা, গল্প, উপন্যাস মিলে। প্রথম বই ‘বৃত্ত ভাঙার গান’ কবিতার। একেবারে নিজের সৃষ্টি সেখানে। কোনো নির্দিষ্ট ফর্মের এক্সপেরিমেন্ট নয়, জ্যেষ্ঠ কবির অনুকরণ অথবা স্বেচ্ছা বৈপরীত্য নয়, বলার ভঙ্গিতে কৃত্রিম নান্দনিকতার আভাস নেই। একেবারেই আপনার ভাষায় দিনরাত্রির ভাব-ভালোবাসা, বিরহ, প্রতিবাদ, নাগরিক জীবনের সংকট, আফসোস, নারী ও নদীর কথা।
দ্বিতীয় বই ‘নীলছায়াঐতি’ ছোটগল্পের সংকলন। লেখক এখানেও তার সিগনেচার বজায় রেখেছেন। কল্পনার নান্দনিক সুতোয় বাস্তবের উপাদানকে বেঁধে রেখেছে অধিকাংশ গল্প। মহাকাব্যিক শূর্পণখা যেমন ইতিহাসের পথ হেঁটে এসেছেন, তেমনি আছে একটি রূপকথা। প্রেমনদীর এধার-ওধারের চিরকালীন দ্বন্দ্ব নিয়ে গল্প।
তৃতীয় বই ‘প্রেম ও কংকর’ কবিতার। এ বইয়ের কবিতাগুলো অনেকটাই বিষয়নির্ভর। মানসপটে গেঁথে যাওয়া মানুষের গল্প কবির হাত কীভাবে উগরে দেয়? সামাজিক দ্বন্দ্ব না অন্তর্দ্বন্দ্ব বেশি প্রকট হয়ে ওঠে? উত্তর দিতে চেষ্টা করেছে কবিতাগুলো। তিনি কবিতায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলেই হয়ত প্রথম উপন্যাস লিখেছেন দেরিতে।
‘স্বপ্নের সাথে বৈরিতা’—একজন সাধারণ মেয়ের সংগ্রাম ও স্বপ্ন দেখার সাহস নিয়ে লেখা। যেখানে নারীর সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ নিজস্ব সমাজ ও আত্মপরিচয়ের টানাপড়েন। উপন্যাসের নির্মেদ বর্ণনা ও পরিমিতিবোধ লেখকের মুন্সিয়ানা প্রকাশ করে।
আবুবকর গিয়াসুদ্দীন লিখে চলেছেন নিজের মতো, নিজের বোধ আর সমাজের মুখোমুখি হয়ে। তিনি সৃজনশীলতার প্রয়োগ ঘটান মানুষের দিকে চেয়ে, পথ আর প্রকৃতির দিকে গিয়ে। যার শিল্প-ক্ষুধা তাকে দিয়ে একের পর এক লিখিয়ে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত বোধ ও চেতনার এই মলাটবদ্ধকরণের সংখ্যা পাক আর না পাক, তিনি বেঁচে থাকুন পাঠকের মনে।
কেকে/এএম