দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব ছিল বিএনপি। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে কঠোর অবস্থানে যায় দলটি। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে এক প্রকার দূরত্বও তৈরি হয় তাদের। তবে গত শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ওই বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া এগুলো নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেও অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ওই বৈঠককে স্বাগত জানালেও আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে হওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, জনগণের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে অতি দ্রুত আমরা যেন ডেমোক্রেটিক ট্রান্সফরমেশনে যেতে পারি সেরকম কার্যক্রম আপনারা নেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘লন্ডনের আলোচনার সূত্র ধরে যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, সেটা খুব শিগগির ইলেকশন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কমিউনিকেট করবেন বলে আশা করি। যেন ইলেকশন কমিশন জনগণের সামনে বলতে পারে যে, তারা সরকারের কাছ থেকে একটা পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক মেসেজ পেয়েছে।’
তবে সালাউদ্দিনের এমন বক্তব্যের পরের দিনই নির্বাচন বিষয়ে কিছুটা নমনীয় বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য একটু ধৈর্য থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অস্থিরতার মধ্যে সারাক্ষণ থাকলে তো হবে না। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। একটু সহনশীল হতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন আমির খসরু। তিনি বলেন, ‘রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে। সবার মতামত একটাই, সে জায়গায় কোথাও দ্বিমত আছে, তা আমরা মনে করি না। এখানে সবাই ঐকমত্য। বিভিন্ন কারণে এই জায়গাটায় আমরা এসেছি এবং জাতীয় ঐকমত্য পোষণ করছি।’
আমির খসরু বলেন, ‘সবার মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরে আসছে এবং এ জায়গাটায় আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। আর দিনক্ষণ যেটা, সেটা তো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। সেটা তো আর সরকারের বলতে পারবে না- আমরাও বলতে পারব না। হ্যাঁ, সেটা তো নির্বাচন কমিশন থেকে আসবে। আমরা অপেক্ষা করব। নিশ্চয়ই আগামী দিনে কোনো একটা সময়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘আমরা ভিন্ন দল করলেও একটা জিনিস যেটা বিএনপি আগামী দিনে, বিশেষভাবে মনোযোগী হচ্ছে- আপনাদের মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটা বড় পরিবর্তন। আমরা জাতীয় স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চাচ্ছি- একটা ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে, যে কথা বারবার বলছি আমরা, জাতীয় স্বার্থে যেসব জায়গায় ঐকমত্যের প্রয়োজন, সেসব জায়গায় আমরা জোর দিচ্ছি।’
বিএনপি নেতা আমীর খসরু আরো বলেন, ‘আমরা যদি একেবারে আস্থাহীন হয়ে যাই, সেটা কিন্তু আমি যে কালচারের কথা বলছি, সংস্কৃতির পরিবর্তনের কথা বলছি, সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকা, সেটার জন্য একটু ধৈর্যও থাকতে হবে। একদম অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তো সমস্যা। এটা কোনো জাতির জন্য কাম্য না।’
প্রসঙ্গ ইশরাক : ‘একটু ধৈর্য ধরি’
আমির খসরু বলেন, ‘এই জায়গাতেই তো প্রশ্ন, আইনিভাবে কোর্টের রায় হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আসছে। সুতরাং, সবাই অপেক্ষায় আছে আরকি। ‘আমরা দেখি, সরকার কী সিদ্ধান্ত দেয়। একটু অপেক্ষা করি, একটু ধৈর্য ধরি।’
কেকে/এআর