সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
‘চরেই জন্ম, চরেই মরতে চাই’
চরবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি
ইলিয়াস বসুনিয়া পবন, হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫, ৫:৫৮ পিএম

৯০ বছরের সোনাভান বেওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের চরেই জন্মেছেন, বড় হয়েছেন এবং এখানেই বিয়ে হয়েছে তার। চরের মাটিই তার জীবনের সব। তবু জীবনের সব প্রিয় কিছুই ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে—স্বামী মোজা মিয়ার কবর আজ ব্রহ্মপুত্রের পেটে, বাবা-মা ও আত্মীয়দের কবরেরও কোনো চিহ্ন নেই।

ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ



‘কবরগুলো নাই, ওইখানে গেলে বুকটা ফাইটা যায়’, ভেজা চোখে এ কথা বলেন তিনি। চরজীবনের কষ্ট সত্ত্বেও চরই তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।

তিনি জানান, জীবনে ১৭–১৮ বার তাকে বসতভিটা বদলাতে হয়েছে। এক চর থেকে আরেক চরে—প্রতিবার শুরু করতে হয়েছে নতুন করে। তবু চর ছাড়তে মন চায় না, ‘চরেই জন্ম, চরেই মরতে চাই’।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের সোনাভান বেওয়ার মতো অনেকেই চর আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন নানা কষ্টে।

ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ


চরজীবনের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এখানকার মানুষ কিছু মৌলিক সুখ খুঁজে পান। সোনাভানের বড় ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৭০) বলেন, বন্যা-ভাঙনে ঘর হারাই, জমি হারাই। কিন্তু বন্যার পর চরজমিতে পলিতে যা ফসল হয়, তা দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, চরের মানুষদের এক মৌলিক জীবন—নদী, মাঠ আর পরিশ্রমে গড়া। খাদ্যাভ্যাসও সহজ—ভাত, রুটি, শাকসবজি আর নদীর মাছেই চলে যায় দিন। শহরের পণ্যের প্রতি তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে।

লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের চর হরিণচড়ার দিনমজুর মফিদুল ইসলাম (৫০) গত বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহরে গিয়েছিলেন—ভেবেছিলেন সেখানেই থাকবেন। কিন্তু দুই মাস রিকশা চালিয়ে দিন চলে না দেখে ফিরে এসেছেন চরে।

তিনি আরো বলেন, চরের কষ্ট কষ্ট না। ওটাই আমাদের অভ্যাস। আমাদের কোনো সম্পদ নেই ঠিকই; কিন্তু অসুখ-বিসুখও কম। তাই আমরা সুখেই আছি।

চর এলাকায় বর্তমানে অনেক পরিবার গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

চর নিয়ে কাজ করেন এনজিও কর্মী আহসানুল কবীর বুলু। তিনি বলেন, আমরা অনেকবার চরের মানুষকে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কেউই রাজি হননি। কারণ তারা জানে, শহরে তাদের কাজের সুযোগ নেই, নেই পরিচিত পরিবেশ।

তিনি আরো বলেন, চরের মানুষকে চরে রেখেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সচেতন করতে হবে। আর তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা যেন যথাযথভাবে পৌঁছে যায়, সেটি নিশ্চিত করা দরকার।

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর বুকে ৫০০টি চরে ছয় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছেন। প্রতিটি চরে ১৫০ থেকে ৪০০ পরিবার রয়েছে, যাদের মূল জীবিকা কৃষিকাজ ও পশুপালন।

বন্যা, খরা, নদীভাঙনের ভেতর দিয়েই তারা জীবন কাটান। তবু এই সংগ্রামী মানুষগুলো তাদের অস্তিত্ব ও শান্তির আশ্রয় খুঁজে পান চরেই। চরের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়নি। এসব মানুষের ভাগ্যের উন্নতির জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় দরকার। এজন্য আমরা চরবিষয়ক মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছি অনেকদিন ধরে।

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close