মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ সাতজন বাংলাদেশিকে ফের পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ৮টার দিকে তুতবাড়ি সংলগ্ন এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
এ বিষয়ে ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। আটকৃত সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। আমরা তাদের কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করেছি।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, বিজিবি আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরববর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর আগে আগে গত ১৫ মে একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশইনের শিকার হয়ে ১৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছিল।
এদিকে একের পর এক পুশইন ও অনুপ্রবেশের ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা। এর প্রভাব পড়েছে জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ এই তিন ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলায়ও।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অন্তত দুই শতাধিক নারী, শিশু, রোহিঙ্গা, ভারতীয় ও বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। এর মধ্যে ১৩৩ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আটক করেছে বিজিবি।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিরা জীবিকার সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। পরে ভারতীয় পুলিশ তাদের ধরে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। সম্প্রতি ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আর তাদের আটক করে থানায় হস্তান্তর করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা ।
বিজিবির তথ্য মতে, গত ১৪ মে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর সীমান্ত দিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৪৪ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। গত ৭ মে কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন এবং ৮ মে বড়লেখার পাল্লাতল ও লাতু সীমান্ত দিয়ে আরো ৪৪ জনসহ ৫৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ১৫ মে কুলাউড়ার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন এবং বড়লেখার গানদাইল সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে আটক করা হয়।
বিজিবি জানায়, আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের মধ্যে অধিকাংশই গরিব ও দিনমজুর শ্রেণির। সীমান্তের ওপারে এখনো কিছু বাংলাদেশি আটক রয়েছে, যাদেরও পুশইনের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গছে।
সীমান্তর্তী মুরইছড়া এলাকাসহ সীমান্তে বসবাসবাসকারীরা এখন চরম নিরাপত্তহীনতায় ও উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় মাঠে গরু চরাতে গেলে প্রায়ই বিএসএফের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। অনেক সময় বিএসএফের সদস্যরা তাদের গালাগাল এবং হুমকি দেন। এ ছাড়া ফসলের মাঠে গেলে তাদের উদ্বেগে থাকতে হয়, কখন জানি বিএসএফ গুলি চালায় বা ধাওয়া দেয়। সীমান্তে নিরাপত্তা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের। পুশইন ও অনুপ্রবেশ শুধু সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য অশনি সংকেত বলেও মনে করেছেন অনেকেইে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলার সব সীমান্তে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন। বিজিবির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই শেষে থানায় ও পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
৪৬-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া এবং ৫২-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান গণমাধ্যমর্কীদের বলেন, সীমান্তে পুশইন ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।
এ দুই কমকর্তা বলেন, আমরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে আছি। প্রতিটি প্রতিটি অনুপ্রবেশের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কেকে/এএম