পটুয়াখালীর বাউফলের হাজী পঞ্চমআলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান, নারী সহকর্মীর প্রতি অন্যায়-অবিচার ও জুলুম, স্কুল ঘর ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাতসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, স্কুলের সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান সোহেল মল্লিকের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে ডেভিল হান্টের অভিযানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোহেল মল্লিকের নানান অপকর্মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক প্রিন্সিয়া আক্তার। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন প্রধান শিক্ষকের অপকর্মের আমলনামা। ওই আবেদনে বলা হয়- পারিবারিক বিরোধের সূত্র ধরে আমার প্রধান শিক্ষক সোহেল মল্লিক হাসিনার আমলের প্রভাব দেখিয়ে আমাকে গত ৫ বছর বিভিন্নভাবে হয়রানি ও মানসিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে স্ট্রিম রোলার চালিয়েছেন। তার আত্মীয় দিয়ে বাড়িঘরেও তাণ্ডব চালিয়েছেন।
এ নিয়ে মামলাও চলমান- যার নম্বর সিআর ৩১৭/২০১৯, সিআর ৩২৮/২০১৯/ সিআর ৩৬৯/২০২০। শুধু তাই নয়, মনগড়া রেজুলেশন তৈরি করে প্রিন্সিয়া আক্তারকে অবৈধভাবে চাপে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে মার্চ পিটিশন জারি হয়। তারপরে তার বেসরকারি অংশের বেতন, কোচিং ফি, পিএফ ফান্ডও স্কুলের অন্যান্য সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রিন্সিয়া আক্তারকে দোষ না করেও ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে সোহেল মল্লিক। এই প্রধান শিক্ষক সালমা নামের এক নারীর বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরানোর ঘটনার মামলায় ৫ দিন জেলও খেটেছিলেন।
অন্যান্য শিক্ষকরা বলছেন, হাজী পঞ্চমআলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার মতো সোহেল মল্লিকের কোনো যোগ্যতা নেই। তারপরেও সাবেক আওয়ামী লীগের এমপিকে দিয়ে লবিং করে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন সোহেল। তার এসএসসিতে রেজাল্ট দ্বিতীয় বিভাগ, এইচএসসিতে বিশেষ বিবেচনায়, আর ডিগ্রিতে পেয়েছেন তৃতীয় বিভাগ। এছাড়া বিএড ছুটিতে গিয়ে প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক।
সহকর্মীদের নির্যাতন করাই সোহেল মল্লিকের নেশা। স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল কবিরের হাজিরা খাতায় ফ্লুইড দিয়ে মুছে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন অযোগ্য এই প্রধান শিক্ষক। এছাড়া অফিস সহকারী আনসার উদ্দিনকে সাময়িক বহিস্কার করেন তিনি। আর প্রিন্সিয়া আক্তারের বেতন টাইম স্কেল বন্ধ করে দেন এই সাইদুর রহমান সোহেল মল্লিক। এক অপকর্মের পরে হাসিনা পালানোর পর ৫ আগষ্টের পরে পালিয়ে যান তিনি। ফলে প্রতিষ্ঠান নিয়ে চিন্তায় পরেন স্থানীয় সচেতন মহল। এমন বাস্তবতায় জেলা প্রশাসক বাউফলের ইউএনওকে বিষয়টি সমাধান করতে নির্দেশ দেন।
এমন বাস্তবতায় ২০ মে ইউএনও এর প্রতিনিধি দল, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝে নেন সিনিয়র শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম । এ সময় তালা ভেঙে প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেখ মুজিবের বড় দুটো ছবি উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় সজিব ওয়াজেদ জয়ের জীবনী সংক্রান্ত বই। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ সময় স্কুল শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা হাজী পঞ্চমআলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান সোহেল মল্লিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সঠিক বিচার কামনা করেন। তারা বলেন, একজন চিহ্নিত আওয়ামী দোসর ছিলেন সোহেল মল্লিক। স্কুলের রুটিন মাফিক কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন পরে থাকতেন আওয়ামী রাজনীতি নিয়ে। স্কুল ঘর ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাত থেকে শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তার। এই অসাধু শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলে থাকাকালীন সরকারের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কেকে/এআর