জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পার্বতীপুর-শিবসমুদ্র সড়কে উন্নয়নের আশ্বাসে শুরু হওয়া প্রকল্প এখন এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ইট বিছানো রাস্তাটি খুঁড়ে ফেলে উধাও হয়ে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারো সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের। এলাকাবাসীর দাবি, উন্নয়নের নামে এমন দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতি ও ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতার দ্রুত তদন্ত করে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
উপজেলার এলজিইডির কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পার্বতীপুর-শিবসমুদ্র ইট বিছানো সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ লাখ ৬১ হাজার টাকায় কাজটি পান মেসার্স আমান ট্রেডিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২০ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক কাজও সম্পন্ন হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাস্তাটির ইট তুলে অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত খুঁড়ে রাখা হয়। এরপর থেকেই কাজ পুরোপুরি বন্ধ। এতে রাস্তা পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সড়ক জুড়ে জমে থাকা পানি ও কর্দমাক্ত অবস্থায় পথচারী, শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণির মানুষ নানাভাবে চরম বিপাকে পড়ছেন।
রাস্তার বর্তমান অবস্থা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,মাটির স্তূপ রাস্তার দুই পাশে ফেলে রাখায় সেটি ড্রেনের রূপ নিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে থাকে।চলাচলে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা। এতে কৃষিপণ্য পরিবহনসহ সাধারণ জনগণের চলাচলে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।শুকনো মৌসুমে ওই রাস্তায় ধুলার ঘনঘটা আবার বর্ষায় সৃষ্টি হয় কাদা- পানির যন্ত্রণা। গ্রামের বাসিন্দারা কাজের অগ্রগতির আশায় কালাই উপজেলা এলজিইডি অফিসে গিয়ে ঘুরে ফিরে শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিদিন ব্যবসায়িক কাজে ৮-১০ বার যাতায়াত করেন। রাস্তার বেহাল অবস্থায় তার ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। ঠিকাদার রাস্তার ইট তুলে অন্যত্র সরিয়ে খোয়া বানিয়ে ফেলে রাখলেও কাজ আর এগোয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা জোবেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাত। এখন রাস্তা এমন যে, ইজিবাইক ঘরে আনতে পারে না। ধুলা-কাদা মিলিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে, শেষে বাধ্য হয়ে বাইকটাই বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
কৃষক আজিজুল হক জানান, রাস্তার কারণে কষ্টের সীমা নেই। মাত্র ২০০ ফুট দূরের পাকা রাস্তায় ফসলের বস্তা নিতে হলে ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এই কষ্টের কথা কাউকে বোঝানো যায় না।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান ট্রেডিং-এর ম্যানেজার আজিজুল হক বলেন, রাস্তাটির নিয়ে কিছু অফিসিয়াল সমস্যা ছিল। এখন সমস্যার সমাধান হয়েছে। সব মালামাল প্রস্তুত রয়েছে। ঈদের আগেই কাজ শুরু করার চেষ্টা করবো, না হলে ঈদের পরপরই।
কালাই উপজেলা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, সড়কের নির্দিষ্ট দূরত্বসংক্রান্ত অবস্থান নির্ধারণে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এই সমস্যার সমাধানে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি ঠিকাদারকে বারবার কাজ শুরু করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
কেকে/এএম