কুমিল্লার দেবিদ্বারে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জুলাই অভ্যুত্থানের আহত, শহিদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা সাড়ে ৩টায় দেবিদ্বার সদরের নিউ মার্কেট এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল দুইটি অনুষ্ঠিত হয়।
একদিকে, সাত দিনের মধ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহর বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। অন্যথায় তাকে দেবিদ্বারে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে তারা।
অপরদিকে, হাসনাত আবদুল্লাহর প্রতি হুমকি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দেবিদ্বারে জুলাই অভ্যুত্থানের আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতা।
জানা গেছে, গত সোমবার (১৯ মে) বিকলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় নেতার। সংবাদ সম্মেলন বক্তরা বলেন, হাসনাত আব্দুল্লহ তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা না চাইলে কুমিল্লার মাটিতে তাকে পা রাখতে দিবেনা কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মী।
এর আগে, কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি চলে এমন একটি বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বিএনপির ওই সংবাদ সম্মেলনের হাসনাত আবদুল্লাহকে হুমকি ও তার প্রতি ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে হাসনাত আবদুল্লাহ অনুসারি ও দেবিদ্বার উপজেলার এনসিপি নেতার একটি বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। বিক্ষোভ মিছিল সফল করতে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো হয় ব্যাপক প্রচারণা।
অপরদিকে, তাদের পরপরই কুমিলা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আহসান মুন্সি অনুসারী বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীর বিক্ষোভ মিছিল ডাক।
দেবিদ্বার নিউ মার্কেট সদরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ঘিরে রেখেছে দেবিদ্বার নিউমার্কেট সদর এলাকা। চারদিকের পরিবেশ থমথমে। দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে নিউ মার্কেট সদরে আসে জুলাই অভ্যুত্থানের আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার। তাদের ব্যানারে লিখা ছিলো, জুলাই অভ্যুত্থানের কণ্ঠস্বর হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রতি হুমকি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি নিয়ে তার কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কসহ সদরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেছেন। পরে তারা দেবিদ্বার স্বাধীনতা চত্বরে বক্তব্য দেন।
তাদের বিক্ষোভ মিছিলটির ২০ মিনিটের ব্যবধানে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। তাদের ব্যানারে লিখা ছিলো, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কে নিয়ে এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহর কুরুচি পূর্ণ বক্তব্যের বিক্ষোভ মিছিল। তাদের বিক্ষোভ মিছিলটিও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ সদরে গুরুত্বপূর্ণ প্রদক্ষিণ করে। পরে তারাও দেবিদ্বার স্বাধীনতা চত্বরে বক্তব্য দেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে হাসনাত আবদুল্লাহর কে হত্যার হুমকির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আওয়ামী লীগ দোসরদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ সময় বক্তারা বলেন, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না হাসানাত আব্দুল্লাহ কে ছিলেন। আজকে তারা স্বাধীনভাবে প্রেস ক্লাবে কথা বলতেছে কার জন্য।
তারা আরো বলেন, বিগত ১৭ বছরে তারা ১৭ সেকেন্ডের জন্য তাদের স্থান প্রেস ক্লাবে হয় নাই। কিন্তু আজকে তারা স্বাধীনভাবে সবকিছু করতেছে এসব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলপ্রসু। তাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে জাতি বিপ্লবীদের অমর্যাদা করে সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাদেরকে অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের সম্মান রক্ষা করুন।
অপরদিকে বিএনপি এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন বক্তারা সাত দিনের মধ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহর বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় তাকে দেবিদ্বারে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজবিউল আহসান মুন্সি বলেন, আজকের ঘোষণা, এ দেবিদ্বারের মানুষের ঘোষনা, এটি একটি সতর্কতা। হাসনাত আব্দুল্লাহ তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেক কিছুই করতে পারেন। জুলাই আন্দোলনে এবং আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধে আপনার ভুমিকা নি:সন্দেহে অতুলনীয়। আপনার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে বলছি যে, এই বক্তব্যটি আপনার রাজনৈতিক পরিপক্ষতার প্রদর্শন নয়। আপনার বক্তব্যে আপনার অস্ত নই আমরা আহত। এটি কোন ব্যাক্তিগত মতামত বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই বক্তব্য আমাদের জন্য একটা গভীর অপমান।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, পাল্টা মিছিল শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো আপত্তিকর ঘটনা হয়নি।
কেকে/ এমএস