পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) থেকে অপসারিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এক বিবৃতিতে বিআরইবি জানায়, পবিস এবং বাপবিবো অভিন্ন সার্ভিস কোড ও একীভূতকরণ একটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়, যা বাপবিবো এবং সংস্থা প্রধানের এখতিয়ারভুক্ত নয়। সরকার এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই চূড়ান্ত। আন্দোলনের নামে অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে গ্রাহকদের জিম্মি করার যেকোনো অপচেষ্টা বরদাশত করা হবে না।
বিআরইবি আরো জানায়, পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়মিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি বাড়ানো, বিশেষ প্রণোদনা চালু, বিদ্যুৎ বিল সুবিধার প্রস্তাবনা, লাইনম্যান ও বিলিং সহকারীদের নিয়োগ ও চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং পারস্পরিক বদলি ও দম্পতির কর্মস্থল নির্ধারণে বিশেষ উদ্যোগ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একীভূতকরণ ও অভিন্ন সার্ভিস কোডের বিষয়টি একটি রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত। এটি কোনভাবেই বাপবিবো বা সংস্থা প্রধানের একক এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ বিষয়ে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তা সকল পক্ষকে মেনে চলতে হবে। গ্রাহকদের জিম্মি করে অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যৌক্তিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে বাপবিবো নিয়মিতভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আসছে। প্রতিটি সমিতি সফর করে সকলের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ এবং সমস্যা শোনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি একটি চলমান, আন্তরিক ও সংস্কারমুখী প্রক্রিয়া।
২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর সংঘটিত দেশব্যাপী ব্ল্যাক-আউটের ঘটনায় জড়িত কিছু দুষ্কৃতিকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তারা একই ধরনের অপতৎপরতায় পুনরায় জড়িয়ে পড়ে। এ ষড়যন্ত্রের কারণে নেত্রকোনায় অক্সিজেনের অভাবে একজন রোগীর মৃত্যুর মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, যা চরম নিন্দনীয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি ১ দিনের পরিবর্তে ২ দিন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা কার্যকর করা হয়েছে এবং ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ছাড়ের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত ৪ হাজার ৭২৩ জন লাইনম্যান লেভেল-১ কে নিয়মিত করা হয়েছে। ১ হাজার ৩০২ জন ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিক বিলিং সহকারীকে অন-প্রবেশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক লাইন শ্রমিকদের মেয়াদ ৬ মাস/১ বছরের পরিবর্তে ২ বছর পর্যন্ত এবং মিটার রিডারদের মেয়াদ ৩ বছর ও এক জায়গায় ৪ মেয়াদে ১২ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। ৬৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পারস্পরিক বদলি এবং দম্পতিদের একই বা কাছাকাছি কর্মস্থলে পদায়নের কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি, চাঁদা আদায়, সভা-সমাবেশ আয়োজন, ও অপপ্রচার ছড়ানো ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চাকরিবিধি ১৯৯২ (সংশোধিত ২০১২)’ মোতাবেক গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য।
বিআরইবি আরো জানায়, বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে—‘আমি’ বা ‘তারা’ নয়—সবাইকে ‘আমরা’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেবা নিশ্চিতকরণে সততা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা পবিস-২ ও ফেনী পবিস এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বাপবিবো ও পবিস যৌথভাবে অংশ নেয়। চাকরিরত অবস্থায় কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর মৃত্যু হলে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধানে বাপবিবো সভা আয়োজন করছে। গ্রাহক ও বিতরণ লাইন অনুপাতে লাইনম্যান নিয়োগ ও সরঞ্জাম চাহিদা নিরূপণে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কিছু কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য অযৌক্তিক আন্দোলন করছে। আবারো ২১ মে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা পবিস এবং বাপবিবোকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র পল্লী বিদ্যুৎ নয়, বরং একটি সফল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসের ষড়যন্ত্র এবং ছাত্র-জনতার মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অপচেষ্টা, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাপবিবো ও পবিসের সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এই কার্যক্রমকে সফলতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
কেকে/এএম