বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নামে এখতিয়ার-বহির্ভুত সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংবাদকর্মী ও উদীচী কর্মীদের প্রশ্নের মুখে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি ভ্যাবেচেকা খেয়ে কোথাও কোথাও প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনটি শেষতক কোনো রকম সদুত্তর ছাড়াই সমাপ্ত করেন বদিউর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা।
বদিউর রহমান গত ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি সম্মেলনে গঠিত কমিটিকে অস্বীকার করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। উদীচীর গঠনতন্ত্র মোতাবেক, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয় মূল কমিটিকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে। জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করার এখতিয়ার রাখে শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তিনি গঠনতন্ত্র অনুসরণ না করে একক সিদ্ধান্তে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। তার সঙ্গে তার অনুসারী কয়েকজন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বদিউর রহমান আগামী ২০ জুন উদীচীর অসমাপ্ত সম্মেলন সম্পন্ন করার দিনও ঘোষণা করেন। তার লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রহমান মুফিজ বদিউর রহমানকে প্রশ্ন করেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি একটি উপ-কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটিকে সহযোগিতা করার লক্ষে এ কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনের কাজ শেষে এ কমিটির আর কার্যকারিতা থাকে না। এবং সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা চালানো বা সংবাদ সম্মেলন আহ্বানের মতো কোনো এখতিয়ার এ কমিটির নেই। তা ছাড়া শেষ হওয়া সম্মেলনকে অসম্পন্ন সম্মেলন দাবি করে পুনরায় সম্মেলন আহ্বানের এখতিয়ারও এ কমিটির নেই।
রহমান মুফিজ প্রশ্ন তোলেন, যদি বদিউর রহমান সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে থাকেন তাহলে কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু রহমান মুফিজ নিজেও সম্মেলন প্রস্তিুতি কমিটির একজন সদস্য। অথচ তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের কথা জানেন না। এমন কি বদিউর রহমান যে অসম্পূর্ণ সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন এ বিষয়েও কোনো আলাপ কোনো বৈধ ও যৌক্তিক ফোরামে তিনি করেননি।
এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন বদিউর রহমান। তিনি বলেন উদীচীর ঐক্যের স্বার্থে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। পাল্টা প্রশ্নে রহমান মুফিজ বলেন, ‘ঐক্য তো আমরা সবাই চাই। সেটার একটা গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে। উদীচীর গঠনতন্ত্রে সমস্ত সাংগঠনিক সঙ্কটের সমাধানের নির্দেশনা আছে। কিন্তু আপনি এখতিয়ার-বহির্ভুতভাবে, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে উদীচীর নামে এ ঐক্যের ডাক দিতে পারেন না।
উদীচীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরিফ নূর এ সময় বদিউর রহমানকে প্রশ্ন করেন, মঞ্চে উপস্থিত বদিউর রহমান ও রেজাউল করিম সিদ্দিকী রানা-- দুজনেই দক্ষ সংগঠক। বিভিন্ন জায়গায় সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বেড়ান। আপনারা তো সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কিন্তু সাংগঠনিক কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে, বিগত কমিটি বা বর্তমান কমিটি— কোনো ফোরামে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া মেনে আলাপ না করে আপনারা এখানে প্রকাশ্যে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেন। এ এখতিয়ার আপনারা কোথায় পেলেন?
আরিফ নূর প্রশ্ন তোলেন, এ সংবাদ সম্মেলন করার আগে কি আপনারা ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য কোনো সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন? বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে সরাসরি এ সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য কি? এ তৎপরতা কি আপনাদের ঐক্য প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না?
এ সময় রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা বদিউর রহমানের বক্তব্য ও অবস্থানের সঙ্গে একমত নন জানিয়ে বলেন, আমি যে কোনো পন্থায় ঐক্য চাই। উদীচীর মধ্যে এ বিভাজন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষণ ঘটাচ্ছে। আমি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলবো না। ঐক্যের আহ্বান জানাতে এখানে একটা সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত হয়েছি অন্য অনেক প্রাক্তন সদস্যের মতো। বদিউর রহমান সাংগঠনিক রীতি ভঙ্গ করছেন কি না, সম্মেলন ঘোষণার ক্ষেত্রে উনার এখতিয়ার আছে কি না, সেইটা উনিই জানাবেন। আমি উদীচীর ঐক্য চাই।
গত ৬,৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন হয়। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সম্মেলনস্থলের বাইরে পাল্টা কমিটি ঘোষণা দেয় একটি পক্ষ। সে কমিটিরও সভাপতি হন বদিউর রহমান। এবং সাধারণ সম্পাদক হন বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। সে কমিটিকে শপথ পাঠ করান উদীচীর এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সেলিম। গত কয়েকমাসে মূল কমিটির পাশাপাশি এ অংশটিও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। বদিউর রহমান আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাল্টা কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিতর্কিত নেতাকর্মীরা।
কেকে/ এমএস