শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫,
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
শিরোনাম: ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্যে ফাটলের চক্রান্ত আ.লীগের      মালয়েশিয়া শ্রমবাজার, সরকারের আশ্বাসেও শঙ্কা      মোহাম্মদপুরে ফের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব       মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু নিয়ে সুখবর      দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন ঘোষণা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়       নগরভবনের সব গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা      এবার পালা জাপার      
খোলাকাগজ স্পেশাল
অপারেশনাল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে দেশের ব্যাংক খাত
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ৯:৪৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সেবার পরিসর দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, ঠিক সেখানে একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অপারেশনাল ঝুঁঁকি। অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, মানবিক ভুল, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা বাইরের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ফলে তৈরি হওয়া এ ঝুঁকি কোনো একটি ব্যাংকের মৌলিক আর্থিক স্থিতিশীলতাকেই বিপন্ন করতে পারে। অথচ এই ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। দেশের ব্যাংকগুলো এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ৭০ শতাংশ ব্যাংকে সুশাসন, দক্ষতা এবং জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে, যা কেবল ব্যাংকিং খাত নয় সমগ্র অর্থনীতির জন্যই গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সংকট মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে স্বতন্ত্র ওআরএম ইউনিট স্থাপন, ঝুঁকিবিষয়ক ডেটা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ভূমিকা পরিষ্কারকরণ এবং দেশীয় প্রেক্ষাপটে উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মতে, ঝুঁকির প্রতি নেতৃত্ব পর্যায়ে সচেতনতা ও ঝুঁকি সংস্কৃতির উন্নয়ন ছাড়া টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
 
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক গবেষণা কর্মশালায় এমন উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। ‘গভর্নেন্স অ্যান্ড প্রাক্টিসেস অব অপারেশনাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন ব্যাংকস’ শীর্ষক গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন শাহ মো. আহসান হাবিব, মো. নেহাল আহমেদ, মো. মহব্বত হোসেন, রেক্সোনা ইয়াসমিন ও মো. ইমন আরেফিন।

সম্প্রতি ৮১টি প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে অপারেশনাল ঝুঁকির ধরন ও অগ্রাধিকারক্রমে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ এই দুই বছরে সবচেয়ে শীর্ষ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সাইবার ঝুঁকি: তথ্য নিরাপত্তা, যা টানা দুই বছর ধরেই প্রথম স্থানে রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিপর্যয়জনিত সাইবার ঝুঁকি ২০২৩ সালে ছিল তৃতীয় স্থানে, যা ২০২৪ সালে উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে লেনদেনে ঝুঁকি ২০২৩ সালে ছিল চতুর্থ স্থানে এবং ২০২৪ সালে উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ ও সম্মতি সংক্রান্ত ঝুঁকি ২০২৩ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ২০২৪ সালে নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে।

পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা, অর্থাৎ নীতিমালা বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি, ২০২৩ সালে ছিল সপ্তম স্থানে এবং ২০২৪ সালে উন্নীত হয়েছে পঞ্চম স্থানে। ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা বা রেজিলিয়েন্স ঝুঁকি এক ধাপ নিচে নেমে ২০২৪ সালে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

এ ছাড়া ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং কার্যনিষ্পাদন ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পর্যায়ক্রমে সপ্তম ও অষ্টম স্থানে রয়েছে, যদিও এদের অবস্থান ২০২৩ সালের তুলনায় অদল-বদল হয়েছে। বাহ্যিক জালিয়াতি ২০২৩ সালে ছিল একাদশ স্থানে, যা ২০২৪ সালে উন্নীত হয়ে নবম স্থানে এসেছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কন্ডাক্ট ঝুঁকি বা কর্মীদের আচরণজনিত ঝুঁকি দুই বছর ধরেই দশম স্থানে অবস্থান করছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য সুরক্ষা ও তৃতীয় পক্ষের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং খাতে অপারেশনাল ঝুঁকি একটি মৌলিক এবং প্রভাবশালী ঝুঁকি হলেও, এটি এখনো কাক্সিক্ষত কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এই ঝুঁকির প্রভাব সরাসরি ক্রেডিট ঝুঁঁকি ও বাজার ঝুঁকিকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, তবুও বেশিরভাগ ব্যাংকে অপারেশনাল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত কাঠামো নেই। ঝুঁকি গভর্ন্যান্স কাঠামো এখনো দুর্বল এবং প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রভাবাধীন, যা ব্যাংকের নিজেদের অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি নিরীক্ষা ও পূর্বাভাস সক্ষমতাকে খর্ব করে। 

বিদ্যমান ওআরএম নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে এবং তা ব্যাংকের কৌশলগত পরিকল্পনায় একীভূত নয়। ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ ও সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। প্রচলিত ‘থ্রি লাইনস অব ডিফেন্স’ মডেল কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়েছে, কারণ এখানেও ভূমিকা বিভাজন অস্পষ্ট। যদিও কিছু ব্যাংকে ‘১.৫ লাইন’ নামক একটি অস্থায়ী সমাধান চালু হয়েছে, তা টেকসই নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসম্পদ নিয়োগে আরও কড়া যাচাই-বাছাই, ভূমিকার দ্বৈততা এড়ানো এবং সুনির্দিষ্ট ভূমিকা বিভাজন এখন সময়ের দাবি। 

গবেষণাপত্রে ব্যাংকিং খাতে অপারেশনাল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক ব্যাংকে কার্যকর ঝুঁকি রিপোর্টিং সিস্টেমের অভাব রয়েছে, যার ফলে ঝুঁকির যথাযথ মূল্যায়ন ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি, ঝুঁকিবিষয়ক সচেতনতা বা ‘রিস্ক কালচার’ এখনো গড়ে ওঠেনি। প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, জব রোটেশন ও বাধ্যতামূলক ছুটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং অডিট ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতাও উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধক হিসেবে উঠে এসেছে। এছাড়া, ঝুঁকিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংহতকরণ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা এখনো সীমিত, যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

অপারেশনাল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বর্তমান দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা কিছু বাস্তবধর্মী সুপারিশ তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, প্রতিটি ব্যাংকে একটি স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী অপারেশনাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যা ঝুঁকির ধরন নিরীক্ষা, ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে। এর জন্য ঝুঁকিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

অভ্যন্তরীণ জালিয়াতি রোধে প্রয়োজন প্রযুক্তি-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা, যেখানে তথ্যপ্রবাহ ও অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, ব্যাংকের মানবসম্পদকে ঝুঁকি সচেতন করে তুলতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রাখা জরুরি। অডিট ও ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে নিয়মিত এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে সময়মতো ঝুঁকি শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মধ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গভীর সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা গড়ে তোলা। ঝুঁকি সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং কৌশলগত পরিকল্পনায় ওআরএম-এর সমন্বয় ছাড়া কোনো ব্যাংক টেকসই ও নিরাপদ কাঠামো গড়ে তুলতে পারবে না। দেশীয় বাস্তবতা অনুযায়ী উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি কার্যকর অপারেশনাল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিআইবিএমের পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশকগুলো প্রশ্নকাঠামোতে রেখে সেখান থেকে যে তথ্যগুলো বের করে এনেছেন তাতে মনে হয়, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নির্দেশকগুলো ভালো অনুশীলন আছে।’ 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  অপারেশনাল ঝুঁকি   ব্যবস্থাপনা   ব্যাংক খাত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চাটমোহরে গাছ থেকে পড়ে কাঠুরিয়ার মৃত্যু
বিটিআরসি থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের হটানোর দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ
‘অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরে আরেকটি ছায়া সরকার পরিচালিত হচ্ছে’
সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক পুশইনের আশঙ্কায় বিজিবির টহল জোরদার
পিরোজপুরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি যাত্রীকল্যাণ সমিতির

সর্বাধিক পঠিত

মতলব উত্তরে আ.লীগ নেতার হামলায় ২ ব্যবসায়ী গুরুতর আহত
স্লোগান নয়, সেবার রাজনীতি: সহাবস্থানে দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবির
কিশোরগঞ্জে স্বামী স্বীকৃতির দাবিতে পারুল রানির অনশন
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নিশাদ ও সম্পাদক ওয়াকিউর
কুমিল্লায় ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন ৭৫ জন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close