মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫,
৩ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলা English

মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
শিরোনাম: পাল্টা হামলায় ইরানে ৪৫০, ইসরায়েলে ৫০ জন নিহত      নেত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাবের স্ক্রিনশট ভাইরাল, সারোয়ার তুষার বললেন আমার না      মুশফিক-শান্তর ফিফটিতে স্বস্তিতে বাংলাদেশ      জ্বালানি তেলের দাম আপাতত বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা      সচিবালয়ে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত      পোশাক খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ      ভোটের আগেই হচ্ছে বৃহত্তর ইসলামি ঐক্য      
গ্রামবাংলা
কক্সবাজারে হবে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ৬:৩৩ পিএম আপডেট: ০৭.০৫.২০২৫ ৭:৩৭ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

দেশের লঘু অপরাধে অভিযুক্তদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পদে তৈরি করতে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে আইনি জটিলতার কারণে তা আশার মুখ দেখছে না। বনবিভাগ  বলছে যেখানে উন্মুক্ত কারাগারের জন্য ১৬০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা পিএফ ল্যান্ড বা  প্রটেকটিভ ফরেস্ট। যার কারণে বনভূমি ধ্বংস হবে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ জানান,  প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুশাসনে বলা হয়েছে ‘সংরক্ষিত বন অধিগ্রহণ করা যাবে না’। ঠিক সেখানেই জেলা প্রশাসক ১নং খাস খতিয়ান থেকে ৮০৩ দাগ হতে কারাগারের জন্য ১৬০ একর বনভূমি বরাদ্দ প্রদান করেছে।  এদিকে বনবিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, বনভূমি কোনো প্রকার বন্দোবস্তি দেওয়ার সুযোগ নাই।  বন্দোবস্তি বাতিলের জন্য ২০১৭ সালে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করা হয়েছে যার নং ৩৯৫/২০১৭।

সূত্র মতে, লঘু অপরাধে অভিযুক্তদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পদে তৈরি করতে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উখিয়া উপজেলার পাগলির বিল মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ৮০৩ নম্বর দাগের ৩১০ একর জমি দেশের ক্ষুদে অপরাধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের স্বার্থে বন্দোবস্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ প্রেরণ করে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্দেশনা মতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন কারা অধিদপ্তরের নামে সংশ্লিষ্ট জমির সমতল ১৬০ একর জমি ভূমি দলিল সম্পাদন করে কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপারকে হস্তান্তর করে। এরপর ২০২২ সালের ২৭ মে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষের উপস্থিতিতে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপন করা হয়।

 কিন্তু গত বছরের (২৫ জুন) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের দারিয়ারদীঘি এলাকার সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ওইসব খুঁটি উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেদিন বন বিভাগের সঙ্গে দখলদার চক্রের লোকজন সঙ্গে থাকায় সমালোচনা চলছে, দখলদারদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এসিএফ আনিস আইন-বহির্ভূতভাবে খুঁটি উপড়ে ফেলেন। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ সংশিষ্ট দপ্তরে অবগত করলে সর্বশেষ গত ২০২২ সালের  ২৪ জুলাই বন বিভাগের ওই এসিএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

এদিকে চিঠির উত্তরে বনবিভাগ  জবাবও প্রদান করে। তারা বলছেন উখিয়ার পাগলিরবিল এলাকায় যে ১৬০ একর বনাঞ্চল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে তা বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাগলিরবিল মৌজার ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়াই মাটনা, ভাদি, বহেরাসহ বিবিধ প্রজাতির ছোট বড় গাছপালা বিদ্যমান যা হাতি, ধানর, বন্য শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির মাপ ও পানির আবাসস্থল বিচরণক্ষেত্র। উক্ত ভূমিতে উন্মুক্ত কারাগার প্রতিষ্ঠা করা হলে বনভূমি সংকুচিত হবে এবং বন, বন্যপ্রাণী হওয়াসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পুনঃপুন অনুরোধ করা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ স্থাপনা নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করেছে। নির্মাণ কাজের চেষ্টা করায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ ২১ ০১ ২২০০ ৭৯০, ২২২ ২৮-৫৯ তাং-৩১/০৯/২০১২ মূলে বর্ণিত ১৬০.০ একর রক্ষিত বনভূমির  পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র গ্রহণ এবং আদালতে দায়েরকৃত রেকর্ড সংশোধনী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার জন্য জেল সুপার, কক্সবাজার জেলা কারাগারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাছাড়া পাগলির বিলে ৩২৫ ৫০ একর গেজেটভুক্ত রক্ষিত বনভূমি উন্মুক্ত কারাগার তৈরির জন্য বন্দোবস্তপ্রদান করায় উক্ত দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য বন অধিকারের পত্রের প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায় পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-২২০০.০০০০০৬৬.৩১,০২৬,০৩৬৬ ত ০৩/০৮/২০১৭ ফ্রি. মূলে সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

আরো জানা যায় সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার হিসেবে ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয় করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’ মর্মে উল্লেখ হয়েছে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি, ২০০১ এর ১৭ অনুচ্ছেদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত বনাঞ্চল বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত থাকবে এবং বর্তমানে ব্যবহৃত বনভূমির সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এমনটা নির্দেশনা রয়েছে।

এছাড়া, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যাপক বনায়ন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন এবং বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ দেশের মোট ভূমির ২৪% এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা যথাসময়ে পূরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান সীমিত বনভূমি রক্ষা এবং বনভূমিতে বিরাজমান বনজ সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ অপরিহার্য এতদ্ব্যতীত, আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নতুন করে বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগও অত্যন্ত সীমিত।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত মামলা নং-১/২০১৬-১৭ ইং মূলে বন্দোবস্ত   প্রদান করা হয়। বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ১৬০.০০ একর জমি কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা এর নামে নামজারি ও জমাভাগ ৮২২ (ওঢ-১) / ২০১৯ নং মামলা মূলে নামজারি খতিয়ান সৃজন করা হয়। যার নামজারি ও জমাভাগ খতিয়ান নং- ১৪২৯, জমির পরিমাণ ১৬০.০০ একর। উক্ত জমির সন সন খাজনা আদায়ে খাজনার দাখিলা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), উখিয়া হতে ডিসিআর সংগ্রহ করে কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা পক্ষে জেলা কারাগার, কক্সবাজার এর পূর্ণ দখল ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার রাজস্ব শাখার স্মারক নং-০৫.২০.২২০০.১২৮.১২.০৭.২০১৬-১১৬১, তারিখ : ১১/১০/২০১৭ইং মোতাবেক উক্ত খাসজমি বর্ণিত উদ্দেশ্যে অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫ এর ৩০০ (ক)/১০ নং অনুচ্ছেদের আলোকে কারা অধিদপ্তরের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের সদয় অনুমোদনের নিমিত্তে বন্দোবস্ত মামলা নং- ০১/২০১৬-২০১৭ (উখিয়া) মূলে নথি সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা মহোদয় সমীপে প্রেরণ করা হয়।

উক্ত প্রস্তাবনা যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে সব প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ পূর্বক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি-১ শাখার স্মারক নং-৩১,০০,০০০০,০৮০, ৪১.১৬৩.১৭-৩৫০, তারিখ: ১৯/০৮/২০১১ ইং মোতাবেক উল্লিখিত মৌজা ও দাগের ১৬০.০০ একর জমি কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা এর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন প্রদান করেন। সে মোতাবেক জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয় কয়েক বছর  আগে।

এর প্রেক্ষিতে গত ৪/১১/২০১৯ ইং তারিখে রেজি.কৃত ১৪৮৬ নং দলিল মূলে সাব-রেজিস্ট্রার উথিয়া এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার সরকারের পক্ষে প্রতীকি মূল্যে উল্লিখিত মৌজা ও দাগের ১৬০.০০ একর জমি কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা এর অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদান করে হস্তান্তর করেন। খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ৮০৩ নং দাগ থেকে ১৬০.০০ একর জমি কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকার নামে রেজিস্ট্রি পাটা মূলে বন্দোবস্ত প্রদান করেছেন। বন্দোবস্ত মূলে প্রাপ্ত হয়ে নালিশি ও অনালিশি ১৬০.০০ একর জমিতে উঁচু-নিচু জায়গা ভরাট পূর্বক সমান করা হয়, বলে জানান কারা কৃর্তপক্ষ। কারা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণে শাসন, সংরক্ষণ ও দখলামল বজায় রয়েছে এমনটা প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। ফলে উক্ত ১৬০.০০ একর জমির বর্তমান মালিক কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা। সংগত কারণেই বন অধিদপ্তর কর্তৃক উক্ত জমির মালিকানা দাবির আইনতগত কোনো ভিত্তি নাই এমনটা মনে করেন।

কারা কৃর্তপক্ষ জানান, বাদী যদিও সরকারি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তার পরেও স্থানীয় ভূমিদস্যূ প্রকৃতির লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশক্রমে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে চায় বলে জানান। তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এমনটা মনে করছেন তারা । প্রকৃতপক্ষে নালিশী ১৬০.০০ একর জমিতে বন বিভাগের কোন স্বত্ব, স্বার্থ বা দখল নাই এমনটা জানান। । ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার এর অতি গুরুত্বপূর্ণ জমি গ্রাস করার কু-মানসে কারা মহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর, ঢাকা এর প্রস্তাবিত ‘মালেশিয়ার সিআরপির আদলে লঘু অপরাধে দন্ডিত ক্ষুদে অপরাধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম” করার জন্য সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান।

এদিকে এ তথ্য প্রকাশ পাবার পর উন্মুক্ত কারাগারের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে দেখা গেছে, এসব জমিতে আমবাগান, চারটি মাছের খামার, পানের বরজ, দখল নিশ্চিত করতে টিনের চালা-বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দখলদারদের ভাষ্য স্থানীয় ভিলেজারদের কাছ থেকে এসব দখল কিনেছেন তারা। অসাধু বনকর্মীদের সহযোগিতায় ভোগ ও দখল বিক্রি হওয়ায় দখলকারদের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে।এরই প্রেক্ষিতে  কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রস্তাবিত দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগারের জন্য বন্দোবস্ত পাওয়া ১৬০ একর জমি দখলের মহোৎসব চলছে। কারা অধিদপ্তরের নামে বরাদ্দ পাওয়া খাস খতিয়ানের এসব জমি অবৈধ দখল হস্তান্তর করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে বন বিভাগের স্থানীয় ভিলেজার (বনের উপকারভোগী) নামধারি চক্র।

দখল চক্রকে অনৈতিকতায় বন বিভাগের অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা সহযোগিতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দ পাওয়া পুরো জমিতে মৎস্য ঘের, অবৈধ বসতি, পানের বরজ, মৌসুমি ফসল চাষ ও খেলার মাঠ করা হয়েছে। বিশাল এ এলাকায় বনজ হাতেগোনা কয়েকটি গাছ ছাড়া বাকি ঝোপঝাড় বৈ কিছুই নেই। এসব কারণেই, দখল ও বিক্রয় বলবৎ রাখতে নানা অপতত্পরতা শুরু করেছে অসাধু চক্রটি। উন্মুক্ত কারাগারের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, কারা অধিদপ্তরের নামে বন্দোবস্ত হওয়া জমিতে সবচেয়ে বড় দখলদার উখিয়ার উত্তর বড়বিল এলাকার মৃত হারু মিয়ার ছেলে মকতুল হোসেন মতু। বনের ভিলেজার হিসেবে পরিচিতির সূত্রে তিনি একাই দখল করেছেন ১২০ একরের মতো জায়গা। দখলের পর এসব জমি বিক্রিও করেছেন চড়া দামে। মহেশখালীর সালাউদ্দিন, নুরুল হক, সেলিম ও আমিনকে প্রায় একশত একর জমির দখল হস্তান্তর করেছেন। রোহিঙ্গা আমির হামজাকে দিয়েছেন ৩ একর। বড়বিল এলাকার বদিউর রহমানের ছেলে নুরুল আলমকে বিক্রি করেম ৫ একর জমি। দখলকার মকতুল হোসেন মতুর স্বাক্ষরে হলফনামায় খাসজমি দখল হস্তান্তরের বেশ কয়েকটি বিক্রয় রশিদ করেছে বলে জানা গেছে।

এসব হলফনামায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকার সোলতান আহমদ গংকে ৭২ শতক, উখিয়ার রত্নপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া এলাকার ছৈয়দ আহমদের স্ত্রী মাবেলা বেগম ও লেঙ্গুরবিল এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ নুরকে ৩ একর ২০ শতক, নাইক্ষ্যংছড়ির রেজু মৌজার বাসিন্দা মো. কালুর ছেলে আবদুল আজিজ গংকে ২ এক ৬ শতক, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি এলাকার নুরুল আলমের স্ত্রী গোলবাহার গংকে ৮ একর ও উত্তর বড়বিল এলাকার নুরুল আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম গংকে ২ একর ৪০ শতক জমি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মতুর দখলবাজ চক্র।

এছাড়াও, বনের ভিলেজার পরিচয় থাকা মতু আরো বিভিন্ন জনের কাছে সরকারি খাসজমি বিক্রি করে দখল দিয়েছেন। তবে, দখল বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত মকতুল হোসেন মতু মুঠোফোনে বলেন, মরহুম বাবা বনবিভাগের হেডম্যান ছিলেন। সেই সুবাদে আমি বনের ভিলেজার হিসেবে বনের প্রয়োজনে কাজ করে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব জায়গা ভোগ দখলে আছি। সমতল জমিতে আমার আম বাগান, একাধিক মাছের ঘের রয়েছে। শুনেছি এসব জমি উন্মুক্ত কারাগারের জন্য কারা অধিদপ্তরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। ১৯৩৫ সনে বনের নামে থাকা জমি বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানে আসায় রেকর্ড সংশোধনে  বনবিভাগ মামলা করেছে বলে জেনেছি। এরপরও সরকার চাইলে যেকোন সময় এ জমি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছি।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) মো. জাবেদ মেহেদী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা বৃহৎ উন্মুক্ত এলাকায় ক্ষুদে অপরাধীদের বৃক্ষরোপণ, অর্গানিক ফলমূল ও সবজি চাষ , মৎস চাষ ও পোল্ট্রি ফার্ম ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মালেশিয়ার সিআরপির আদলে উক্ত স্থানে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে উক্ত এলাকায় ভবিষ্যতে নতুন ভাবে বনায়ন সৃষ্টিসহ ব্যাপকহারে মৎস চাষ, পশু ও হাঁস মুরগী পালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রাকৃতিক ভাবেও বিভিন্ন প্রানীর বসবাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে। এসব কারণেই উন্মুক্ত কারাগারে বন ও পরিবেশের ক্ষতির কোন আশংকা নেই বরং তা বন ও পরিবেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ নুরুল ইসলাম জানান,  রেকর্ড় সংশোধণীর জন্য আদালতে মামলা করা হয়েছে। যতক্ষণ এই মামলা নিস্পত্তি হচ্ছেনা ততক্ষণ কারাগার করা যাচ্ছে না । কারণ এই জায়গাটি কার আগে তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিএস জরিপে রক্ষিত বন ঘোষণার প্রতিফলন দেখা না গেলেও ১৯৩৫ সনের গেজেট নোটিফিকেশন কার্যকর ও বলবৎ থাকবে বলে প্রচার আছে। গেজেট বিজ্ঞপ্তি কখনো তামাদি হতে পারে না। রক্ষিত বনভূমি বন্দোবস্তি প্রদান বা গ্রহণের এখতিয়ার কারো নেই।

বন আইনের বিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গেজেট বিজ্ঞপ্তি মূলে ঘোষিত রক্ষিত বনভূমি গেজেট বিজ্ঞপ্তি মূলে বাদ না দেওয়া পর্যন্ত তা বনভূমি হিসেবে বহাল থাকবে। তাই যেহেতু গেজেট মূলে আমরা পাহারাদার সেহেতু নিয়ম মতে জমি হাস্তান্তর হলে আমাদের উচ্চবাচ্য করার সুযোগ ও প্রয়োজন কোনটাই থাকে না। জেলা প্রশাসন কারা কর্তৃপক্ষকে জমিটি বুঝিয়ে দিয়েছে বলে প্রচার করা হলেও সেদিন বনবিভাগকে ডাকা হয়নি বলে জানতে পেরেছি। যতক্ষণ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় হস্তান্তর হয় না, ততক্ষণ জমিটি রক্ষায় আমাদের তৎপরতা চালানো দায়িত্বে পড়ে। তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত কারাগারের জন্য বরাদ্দ করা জায়গাতে অবৈধ স্থাপনার কথা শুনেছি। অবৈধ দখলবাজদের উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনকে আবেদন করা হবে। তবে- এসব জমি তার কর্মকালে দখল হয়নি বলে দাবি করেন ডিএফও।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সালাহ উদ্দিনের কাছ থেকে উন্মুক্ত কারাগার তৈরি সরকারি সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি জানান, এটির আপডেট তথ্য আমার কাছে বর্তমানে নাই। আপনাকে জেনে জানাতে হবে।

কেকে/এএস


মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতা সুজনের জন্মদিনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তানের মৃত্যুর পর মারা গেল মা, নিহত ৩
টেস্ট দল হিসেবে টাইগারদের প্রথম বছর
পাল্টা হামলায় ইরানে ৪৫০, ইসরায়েলে ৫০ জন নিহত
ফিউচার নেশন : উদ্ভাবন ও নেতৃত্বে যুব সমাজের ক্ষমতায়ন

সর্বাধিক পঠিত

মাদ্রাসায় না এসেও ১২ বছর ধরে বেতন তোলেন অফিস সহকারী!
ঈশ্বরগঞ্জে গরু-ছাগল ও বসতঘর লুটপাট
কাউনিয়ায় টাকার বিনিময়ে টিসিবি কার্ড বিতরণ, ইউপি চেয়ারম্যান আটক
জাতীয় নির্বাচন কোনো অজুহাতেই পেছানো উচিত নয় : সিপিবি নেতা প্রিন্স
বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতা সুজনের জন্মদিনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close