# মুনাফা সিন্ডিকেটের হাতে
# কমতে পারে লবণ উৎপাদন
# লবণ খাতে জড়িত ৫ লাখ মানুষ
কক্সবাজারে
মাঠ পর্যায়ে হঠ্যাৎ করে লবণের দরপতন শুরু হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম
কমেছে বস্তা প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না লবণ
চাষীদের। তবে এই দরপতন বেশিদিন থাকবে না বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।
চট্রগ্রামের
বাশখালী উপজেলার কিছু অংশ ও কক্সবাজার জেলার ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ
হচ্ছে। এর সাথে জড়িত পাঁচ লাখ মানুষ। নভেম্বর থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়।
মৌসুমের শুরুতে ভাল দাম পেলেও মাঝামাঝি এসে লবনের দাম কমতে শুরু করেছে।
আগে
কাদামাটি দিয়ে শুরু। মাটির সঙ্গে থাকত সামান্য পরিমাণ লবণের কণা। মাঠ থেকে
কাদা তুলে এনে তৈরি হতো লবণ। সে অবস্থা বদলেছে। এখন মাঠেই পাওয়া যাচ্ছে
সাদা চকচকে লবণ। চাষ প্রক্রিয়ায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। বছরে বছরে বাড়ছে
উৎপাদনের পরিমাণ। চেষ্টাটা চাষীদের। এখানেই প্রমাণিত লবণচাষের সম্ভাবনা
ব্যাপক। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলে কি হবে! সম্ভাবনা বিকাশের উদ্যোগ নেই। যুগ
যুগ ধরে অবহেলায়ই থেকে যাচ্ছে লবণখাত।
জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে একমন
লবণ উৎপাদন করতে খরচ গড়ে আড়াইশ টাকা হলেও মিল মালিকরা এখন মাঠ থেকে লবণ
কিনছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে। এতে লবণ চাষীদের লবণ উৎপাদনের খরচ তুলতে
পারছে না। হঠাৎ এমন দরপতনে মিল মালিকদের দায়ী করছে লবণ চাষীরা। কিছুদিন আগে
মন প্রতি ২শ’ টাকা বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যা চাষীরা নিজেরে খরচ
তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য এখন ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করেছে বলে
জানিয়েছেন লবণ চাষী জিয়ারু।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে জেলায় প্রায় দেড় লাখ মেট্রিকটন লবণ কম উৎপাদন
হতে পারে বলেও ধারণা করছে বিসিক কক্সবাজার অফিস। আর এতে এ কয়েকদিনে অন্তত
কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছে প্রান্তিক চাষীরা। এতে করে প্রান্তিক
লবণ চাষীদের মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থায় পরিনত হয়েছে। একদিকে লবণেল দাম
কম অন্যদিকে বৃষ্টি যার কারণে যারা লবণ মাঠ বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করেছে তারা
বেশিভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে জানান লবণ চাষীরা। যার কারণে
প্রণোদণার আশায় রয়েছে অনেক চাষী।
কক্সবাজারের ইসলামপুরের বিভিন্ন
জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে বৃষ্টির পানি থাকার কারণে লবণ চাষীরা দোকানে
বসে অলস সময় পার করছে। তাছাড়া লবণ উৎপাদনে সূর্যের তাপ তেমনটা না থাকার
কারণে আগামী এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান লবণ
চাষীরা।
লবণের দাম নিয়ে এমনিতেই হতাশ কক্সবাজার জেলার লবণচাষীরা।
তার ওপর বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকটা। নষ্ট
হয়েছে মাঠের লবণ। এতে লবণচাষীদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়ল।দেশের একমাত্র লবণ
উৎপাদনকেন্দ্রিক এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ। এই
দুই অঞ্চলের প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করেন চাষীরা। গত ২ নভেম্বর
মৌসুমের প্রথম দফায় মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়।
কক্সবাজার লবণ
শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে
চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন। এ বছর একমাস আগে অক্টোবর থেকে মাঠে নেমেছেন
চাষীরা। এবার ৩৭ হাজার চাষী লবণ চাষে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মাঠে
উৎপাদন কাজে জড়িত আছেন আরও ৭৫ হাজার শ্রমিক। পরিবহন, লোড-আনলোড এবং
মিলপর্যায়ে প্যাকেজিং ও বাজারজাত মিলিয়ে লবণ শিল্পে পাঁচ লাখ মানুষ
নিয়োজিত। এ বছর প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষে ছিল। এর মধ্যে চকরিয়া,
পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা এবং
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক লবণ উৎপাদনের
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কমতে পারে লক্ষ্যমাত্রা।
কক্সবাজার
লবণ চাষী সমতিরি সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম জানান, মিল মালিক
সিন্ডিকেটের কারনে আমাদের মাঠের লবণের দরপতন শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে
আগামীতে লবণ চাষাবাদে আমাদের কষ্ট হবে। আশা করছি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে
ন্যাযমূল্যে তারা লবণ ক্রয় করবে তাতে লবণ শিল্প বাঁচবে। লবণের ন্যাযমূল্য
নির্ধারণ ও দরপতন বন্ধে সম্প্রতি কক্সবাজার লবণ চাষী সমিতি ও ব্যবসায়ীরা
প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসক বরাবর
স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান।
লবণ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে
জানা গেছে, প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এখন কিছুটা বাড়িয়েছে।
কিন্তু এ পরিমাণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি। এতে কেজি
প্রতি তিনটাকা থেকে টার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে চাষিদের।
লবণ
চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
কিন্তু এ পরিমাণ লবণ উৎপাদনে চাষীদের খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি। এতে কেজি
প্রতি তিন টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে চাষিদের।
চাষীদের অভিযোগ, লবণ মিল
মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ
করেছেন। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে
৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর ফলে এই শিল্পের লাভ পুরোটাই যাচ্ছে মিল মালিক ও
ব্যবসায়ীদের পকেটে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও
কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর,
কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের
বাঁশখালী উপজেলায় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হচ্ছে। গত শুক্রবার
পর্যন্ত গত ৫ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি
মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।
দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। তবে শনিবার ভোর
থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার
একমাত্র টেকনাফে লবণ উৎপাদন চালু থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও উৎপাদন
পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন চাষিরা। এর আগের দুদিনের বৃষ্টিতে মহেশখালী,
কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর ও বাঁশখালীতে লবণ উৎপাদন
বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যা লবণ উৎপাদন হয়েছে তা দিয়ে দেশের চাহিদা
মেটানো যেতে পারে।
চাষীদের
অভিযোগ, লবণ মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে এখন
২০০ থেকে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি
প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর ফলে এই শিল্পের
লাভ পুরোটাই যাচ্ছে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে।
সম্প্রতি
বৃষ্টির কারণে অনেকদিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল । ৬৮ হাজার ৫০৫ একরের শতভাগ
মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো.
জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।
তিনি
জানান, একবার বৃষ্টি হলে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। মাঠে
জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরিয়ে লবণ উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি, মাঠের
পরিচর্যা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। তাছাড়া সূর্যের প্রখর তাপ না থাকলে
লবণ উৎপাদন হয় না। গত মৌসুমে জেলায় দৈনিক সর্বোচ্চ ৪২ হাজার মেট্রিক টন
লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৩৬
হাজার মেট্রিক টন। এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকায়, যা
অতীতে দেখা যায়নি। তবে এখণ কিছুটা বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে । লোকসান দিয়ে
লবণ বিক্রি করতে করতে হতাশ চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লবণের
দাম কেন কমে গেল, তার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
কক্সবাজার
বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, এমন বৃষ্টি থাকলে
আমাদের উৎপাদন লক্ষমাত্রায় পৌছানো কঠিন হবে। বৃষ্টির কারণে প্রায় ২ লাখ
মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হতে পারে। কারণ একবার বৃষ্টি হলে চাষীরা প্রায় এক
সপ্তাহ মাঠে যাওয়ার বা লবণ উৎপাদন করার সুযোগ থাকে না। তবে বর্তমান
পরিস্থিতি কিছুটা অনুকুলে রয়েছে । যদি লবণ আমদানি করা না হয় তবে চাষীরা
সঠিক দাম পাবে।
কেকে/এজে