বায়ুদূষণে রোগ-ব্যাধি ও করণীয়
ডা. কাজী নওশাদ হোসেন
🕐 ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০১৯
নির্মল বায়ু যেমন মানুষকে বাঁচাতে পারে, তেমনি দূষিত বায়ু মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালের ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে এক নম্বর ঝুঁকি হলো বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। ঢাকার বায়ুদূষণের চিত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে ঢাকার বায়ুমান ছিল মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দিল্লির পরই ঢাকার অবস্থান।
রাজধানীতে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। এ ছাড়া রাজধানীজুড়ে চলছে উন্নয়ন কাজ, ফলে যানবাহন চলাচলের সময় ধুলাবালু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ধুলা দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ধুলা দূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, অ্যালার্জি, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ধুলা দূষণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে; তেমনি আর্থিক ও পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। ধুলা দূষণের কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ অন্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে ভর্তি হয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ভয়াবহ ধুলা দূষণের শিকার হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার রাস্তার ধুলায় সিসা ও নিকেলের মাত্রা দ্বিগুণের বেশি। হৃদরোগ, ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ভারী ধাতু সিসা, যা মানবদেহের শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া অকার্যকর করতে পারে। প্রসূতির জন্যও হতে পারে বিপদের কারণ।
বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় :
* বাড়ি, কারখানা, গাড়ি থেকে ধোঁয়া নিঃসরণ কম করার চেষ্টা করুন।
* আতশবাজি ব্যবহার করবেন না।
* জঞ্জাল ডাস্টবিনে ফেলুন, পোড়াবেন না।
* থুতু ফেলার জন্য আলাদা জায়গা বা সব সময় পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়া যায় এমন জায়গা ব্যবহার করুন।
* সবাইকে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলার কথা বলুন।
* ব্যস্ত সড়কে ব্যস্ত সময়ে হেঁটে যাতায়াত কম করা।
* যানজট আছে এমন সড়কে কম অবস্থান করা।
* বেশি দূষিত এলাকায় কম যাওয়া।
* শিশুদের যত সম্ভব মোটরগাড়ির সামনে কম নেওয়া।
* শিশুদের সামনে ধূমপান না করা।
* কাঠ বা জৈব জ্বালানি দিয়ে রান্না হয় এমন স্থানে শিশুদের যেতে না দেওয়া।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, রক্ত পরিসঞ্চালন, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।