কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় ৫শ গজের মধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক। জেলা প্রশাসন যেমন নিরব ভুমিকায় রয়েছে ঠিক তেমনি কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস কর্মকর্তারা যেন এ ব্যাপারে কিছু জানেন না এমন ভাব নিয়ে তারা চোখ বন্ধ করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই চোখ বন্ধ রাখার জন্য মাসিক একটি মাসোহারা সিভিল সার্জনের অফিসের কয়েক কর্মকর্তার হাতে পৌছে যায় বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রামু উপজেলায় ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালিন ইউএনও ফাহমিদা মোস্তাফা থাকাকালিন ২টি ডেন্টাল ক্লিনিক সিলগালা করা হলেও এর পর আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি রামুতে। জানা গেছে, কক্সবাজারে চলছে দাঁতের চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণা। গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা শিকার হচ্ছে প্রতারণার। শহরের অলিগলিতে এ সব ডেন্টাল ক্লিনিকের নিয়োজিত দালালরা গাড়ি থেকে নামলেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে রোগিদের নিয়ে যায় দাঁতের চিকিৎসার তাদের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে। সেখানে সর্বশান্ত করে ছাড়ে রোগিদের।
কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যেই নামে বেনামে গজিয়ে উঠছে দাঁতের চিকিৎসার কথিত অর্ধশত প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছেন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে অনেকটা জোর খাঁটিয়ে গড়ে তোলা এ সব অবৈধ ক্লিনিকের বেশিরভাগই অনুমোদনহীন। নেই চিকিৎসকের উচ্চতর ডিগ্রি, দাঁতের চিকিৎসার জন্য যে যন্ত্রপাতি দরকার তার কোনটিই নেই। তবুও চলছে অপচিকিৎসার রমরমা বাণিজ্য। জানা যায়, বেশ ক'বছর আগে হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত ডেন্টাল ক্লিনিক সমুহে ভ্রাম্যমান আদালত ‘অনুমোদনহীন ডেন্টাল ক্লিনিক’ বন্ধে অভিযান চালিয়ে ৭টিকে সিলগালা করে এর পর থেকে আর কোন অভিযান পরিচালনা করেনি জেলা প্রশাসন।
সিভল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মচারির সাথে লেনদেনগত সম্পর্কের কারণে এসব ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করতে কোন সমস্যা হয়না বলে অভিযোগ। শহরের অভ্যন্তরে মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে নতুন প্যাথলজি গজিয়েছে ১২টি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধুমাত্র কতিপয় চিকিৎসকের আর্শিবাদে মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে উক্ত ডেন্টাল ক্লিনিকসমুহ গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়,একটি ডেন্টাল ক্লিনিক খোলার জন্য সরকারি অনুমোদন, নির্দিষ্ট জায়গা, বিএমডিসির অনুমোদিত চিকিৎসক, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, ট্রেড লাইসেন্স, জনবলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দরকার হলেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা এ সব ডেন্টাল ক্লিনিকের কোন কাগজপত্র নেই। ফলে অজ্ঞাত শক্তির বলে খুব সহজেই গড়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠান। রংচটা বিজ্ঞাপন, বাহারী সব সেবাদানের নাম করে ডাক্তারের নামের পাশে নানা সব উচ্চতর ডিগ্রি বসিয়ে সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করছে উক্ত ডেন্টাল সেন্টার। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা।
খরুলিয়ার মাষ্টার পাড়ার গৃহবধু সাহেদা বেগম জানান, হঠাৎ প্রচন্ড দাঁত ব্যাথা শুরু হলে পান বাজার সড়কে চিকিৎসা করাতে আসি। আমাকে নিয়ে কয়েকটি ক্লিনিকের লোকজন নানা সুবিধার কথা বলে টানাটানি শুরু করে। শেষমেষ আমার সিদ্ধান্তেই ডাঃ বশিরের কাছে চিকিৎসা করি। কিন্তু দালালের দৌরাত্ব্য দেখে মনে হয়েছে এটা যেন দাঁতের চিকিৎসার বাজার।
এদিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ করে হাসপাতাল সড়কে অনুমোদন ছাড়া চলা ১২/১৩টি অনুমোদনহীন দাঁতের চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৩ বছর আগে বন্ধের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কার কথা কে শুনে। নোটিশের তোয়াক্কা না করে দিব্যি চলছে এ সব ডেন্টাল সেন্টার। সিভিল সার্জন অফিস থেকে কালো তালিকাভুক্ত করে নোটিশ দেওয়ার ৪ বছর পরও দেদারছে চলছে এসব ক্লিনিক।
নোটিশ পাওয়া এ সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমুহ হল হাসপাতাল সড়কের ডিজিটাল ডেন্টাল পয়েন্ট, ডেন্টাল সার্জারি, ফ্যামিলি ডেন্টাল সেন্টার, কক্স ডেন্টাল সেন্টাল, মডার্ণ ডেন্টাল হাউজ, ওরাল ডেন্টাল, মুমিন রাজুধনন্তরি ডেন্টাল কেয়ার। কিন্তু কি কারণে কার শক্তিতে এত বছর এসব অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক চলে তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনই ভালো জানে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চালানো অভিযান লোক দেখানো কিনা তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই ভালো জানেন। পাবলিকের বারোটা না বাজা পর্যন্ত হয়ত থামবেনা এসব ডেন্টাল সেন্টার। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শহরে আরো শতাধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক গজিয়ে উঠার আশংকা রয়েছে।
এদিকে শহরের পাশাপাশি উখিয়া উপজেলাতেও ডেন্টাল ক্লিনিকের জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ায় লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডেন্টাল ক্লিনিক। বিভিন্ন স্টেশন ও হাটবাজারে প্রশাসনের চোখের সামনে এসব ডেন্টাল ক্লিনিক সেন্টারে অপ চিকিৎসা চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কোটবাজার জমজম মার্কেটে কক্সবাজার ডেন্টাল কেয়ার, ইসমাইল ডেন্টাল কেয়ার, মোছা ডেন্টাল কেয়ার বিসমিল্লাহ ডেন্টাল কেয়ার, বালুখালীতে বিকে ডেন্টাল কেয়ার, থাইংখালীতে সেবা ডেন্টাল কেয়ার, কুতুপালংয়ে রায়হান ডেন্টাল কেয়ার ও ফরিদা ডেন্টাল কেয়ার রয়েছে। উক্ত ডেন্টাল কেয়ারের কোন বৈধতা কিংবা লাইসেন্স নাই নেই।
সচেতন নাগরিক সমাজের অভিযোগ, এ সব অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিকে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে প্রতিনিয়ত অপ চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতারিত হয়ে অসংখ্য রোগী হয়রানি সহ টাকা অপচয়ের শিকার হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ায় ২৭ টি প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়াগনস্টিক, প্যাথলজি ল্যাব, ক্লিনিক ও ডেন্টাল কেয়ার সেন্টার রয়েছে। তৎমধ্যে ৮ টি ডেন্টাল কেয়ার সেন্টার থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নুরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান চলতি বছর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এসব ডেন্টাল কেয়ার সেন্টারে কোন বৈধ লাইসেন্স পত্র পাওয়া যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সাজেদুল ইমরান শাওন জানান, ইতিমধ্যে অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযান চলমান থাকবে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদুল হক জানান, আমি নতুন দায়িত্ব নিলাম । গণ মানষের কোন ধরনের যেন সমস্যা না হয় এবং যারা অবৈধভাবে ডেন্টাল ক্লিনিক চালাচ্ছে তাদের বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো এতে সকলের সহযোগিতা চাই।
কেকে/এআর