বদলে যাচ্ছে কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলের চিরচেনা চিত্র। উন্নত পদ্ধতিতে বাড়ির উঠানসহ আশপাশের জমিতে শাক-সবজিসহ বস্তায় আদা চাষ ও ভেড়া পালন করে চরের মানুষ ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। একসময় কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ছিল ধু-ধু বালিচর। বন্যা ও খরায় লোকসানি ছিল যেন চরের কৃষকদের নিয়তি। এখন সেখানে সবুজের সমারোহ। চরের কৃষকরা এখন উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহি হয়ে উঠছেন।
একসময় এখানকার কৃষকরা প্রাচীন পদ্ধতিতে মাঠে লাউ, করলা, বেগুন, বরবটি লালশাক, মুলাশাক আবাদ করত। এখন তারা প্রশিক্ষণ পেয়ে বেড, মাচা ও বস্তা পদ্ধতিতে আদাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ ও ভেড়া পালন করছে। খেতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন কেঁচো কম্পোষ্ট সার। এতে ফলনও যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাভও তেমন হচ্ছে। তাদের এ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষি বিভাগসহ বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ। তারা জেলার চিলমারী রৌমারী ও সদর উপজেলার ২৮টি চরের ৮৪০টি কৃষক পরিবারকে বছরে দুইবার সবজি বীজ ও কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরির জন্য কেঁচোসহ বিভিন্ন সামগ্রী, বস্তায় আদা চাষের জন্য বস্তা ও ভেড়া পালনের জন্য একটি করে ভেড়া প্রদানসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
সরেজমিন জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চরযাত্রাপুর গ্রামের নারী কৃষক আকলিমা বেগম তার বাড়ির পাশে ৫টি ভেড়াকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাকে একটি ভেড়া দেওয়া হয়েছিল। তা থেকে এখন ৫টি ভেড়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি ভেড়া বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। কখনও দুটি কখনো ৩টি। ভেড়াকে বাড়তি খাবার দিতে হয় না।
একই গ্রামের নাজমা বেগম বলেন, আগে বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি আবাদ করলেও আধুনিক পদ্ধতি না জানায় ফলন ভালো হতো না। এখন প্রশিক্ষণ পেয়ে বেড ও মাচা পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা লাভবান হচ্ছি। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কেঁচো কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করছি। এতে সারও কিনতে হচ্ছে কম।
ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশীপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় চরের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রামের ২৮টি চরের ৮৪০টি পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য চরের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, চরঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে কৃষিবিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেমন- ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তিতে সবজি চাষে সহায়তা করছে। এতে চরের কৃষকরা প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে চরের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, চরাঞ্চলের জন্য ভেড়া পালন একটি উপযুক্ত পেশা। চরে প্রচুর পরিমাণে ঘাস, লতা-পাতা থাকায় বাড়তি খাবার দিতে হয় না। আর এর রোগ ব্যধিও কম। জেলার চরাঞ্চলগুলোতে ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি একটি ভালো উদ্যোগ। তাদের সঙ্গে আমরাও প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও ভেকসিনেশন সাপোর্ট দিচ্ছি। এতে চরাঞ্চলের নারীদের ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কেকে/ এমএস