বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
ইচ্ছেডানা
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ও কিশোর দল
সাগর আহমেদ
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১:৪২ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

ইউরোপের একটি ছবির মতো সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ জার্মানি। চারদিকে নয়নাভিরাম প্রকৃতি আর সারা দেশজুড়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা নদ, নদী দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। টোকন মামা কিশোর দলের তিন সদস্য অপু, তিয়ান ও টিয়ানাকে নিয়ে ট্যুরিস্ট হিসেবে জার্মানিতে বেড়াতে এসেছেন। উদ্যেশ্য- জার্মানির বড় বড় শহর ঘুরে দেখা। 

বন, বার্লিন, রাইখস্ট্যাগ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ শহর ঘুরে বেড়িয়ে ওরা পৌঁছল হ্যানোভার শহরে। এখানের ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বিশেষ ভাবে তৈরি ও খুব সুস্বাদু ডোনাট, বার্গার, মমো ইত্যাদি পাওয়া যায়। আর মজাদার খাবারের সন্ধান পেলে তিয়ান যে খুব খুশি হয় তা বলাইবাহুল্য। ওরা সেভোয়ারি ট্রিট নামের একটি ফাস্টফুডের দোকানে মজা করে ডোনাট, মমো ও লেমনেড খেয়ে বাইরে বেরুতেই টোকন মামা বললেন, বলতো আর কোথায় যাওয়া যায়? টিয়ানা ঠোঁট উল্টে বলল, সেটা আমরা কি জানি? আপনি এ দেশে আগে অনেকবার এসেছেন, আপনি জানেন ঘুরে বেড়ানোর মতো আর কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় গেলে আমরা মজা পাবো। 

টোকন মামা মুখ টিপে হেসে বলল তোমরা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পটা পাঠ্যবইয়ে পড়োনি? অপু, তিয়ান ও টিয়ানা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলল পড়েছি, পড়েছি। টোকন মামা বললেন এবার আমরা হ্যামিলন শহরে যাব। ওরা আরেকবার চেঁচিয়ে উঠলো, হুররে। কিছুক্ষণ পর টোকন মামা ও কিশোর দলের সদস্যরা একটা ভোক্স ওয়াগন গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিল হ্যামিলন শহরের দিকে। বেশি দূরে নয়, হ্যানোভার শহর থেকে মাত্র ৩৩ মাইল দক্ষিণে। এক ঘণ্টা পেরুবার আগেই ওরা হ্যামিলন শহরে পৌঁছে গেল। ওরা শহরের ভেতর দিয়ে গাড়িতে চড়ে প্যারাগন সাফারি পার্কের দিকে যাচ্ছিল, পথে একটা বিশাল জুয়েলারি শপ থেকে হৈচৈ, চিৎকার, চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। জুয়েলারি শপটার নাম  অর্নেট গ্রান্ড জুয়েলারি। টোকন মামা অপু, তিয়ান ও টিয়ানাকে বললেন, চলতো দেখে আসি কি হয়েছে ওখানে। 

সবাই ভোক্স ওয়াগন গাড়ি থেকে নেমে জুয়েলারি শপটার দিকে এগিয়ে চলল। বাট উয়িং ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই তারা অবাক হয়ে গেল। জুয়েলারি শপটার সবগুলো শোকেস খালি। একটাতেও কোনো অলঙ্কার নেই। ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা সেলসম্যানদের চোখে মুখে আতঙ্ক। কিছুক্ষণ পরেই একদল পুলিশ  এসে ঢুকলো। সেলসম্যানদের কাছ থেকে জানা গেল একজন মুখোশ পরা অদ্ভুত লোক, মুখে লম্বা, লিকলিকে একটা বাঁশি হঠাৎ করে দোকানে ঢুকে পড়ে। সে হঠাৎ বাঁশিটা বাজাতে শুরু করে। আর দোকানে যত সেলসম্যান ও কাস্টমার ছিল তারা সবাই যেন স্থির, নিশ্চল ও ঘোরের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা যে যেখানে ছিল, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। 

বাঁশিওয়ালা লোকটি সবার চোখের সামনে দিয়ে শোকেসের গহনাগুলো একটা লম্বা ঝোলায় ভরে নিয়ে চলে যায়। সবাই সম্মোহিত হয়ে  আরও বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ করেই সবার জ্ঞান ও সচেতনতা ফিরে আসে। অনেকেই হৈচৈ শুরু করে দেয়। একজন সেলসম্যান পুলিশে ফোন করে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ এসে হাজির হয়ে যায়। তারা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে টোকন মামা,অপু, তিয়ান ও টিয়ানা সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আবার গাড়িতে চড়ে প্যারাগন সাফারি পার্কের দিকে রওনা দেয়। সাফারি পার্কে অনেক পশু, পাখির সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। বাঘ, সিংহ, হরিণ এগুলো তো পরিচিত প্রাণী। কিন্তু ওরা অবাক হলো পান্ডা পিঁপড়া নামক এক মজার প্রাণী দেখে। এটি বড় আকৃতির এক ধরনের পতঙ্গ। পিঁপড়ার মতো দেখতে কিন্তু শরীরটা পান্ডার মতো সাদা কালোয় ডোরাকাটা। প্যারাগন সাফারি পার্ক থেকে বেরিয়ে তারা হ্যামিলন শহরের ড্রাগন হিরো ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে উঠলো। ক্লান্তিতে তারা সবাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লো। 

পরের দিন হোটেলে সকালের নাস্তা খেয়ে ওরা আবার শহরটা ঘুরে দেখতে বের হলো। টোকন মামা কিশোর দলের তিন সদস্য অপু, তিয়ান ও টিয়ানাকে নিয়ে রিজ ম্যাক্স ব্যাংকে গেলেন। তার টাকা ফুরিয়ে গেছে। ট্রাভেলার্স চেক দিয়ে যখন তিনি টাকা তুলছিলেন তখন হঠাৎ করে হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালার দেখা মিললো। লম্বা চওড়া সেই লোকটি ঝোলা থেকে বাঁশি বের করে বাজাতে শুরু করল। অদ্ভুত মোহন সুর ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে।  সঙ্গে খুব হালকা একটা মিষ্টি গন্ধ। গন্ধটা নাকে আসতেই টোকন মামা কিশোর দলের সবাইকে দম বন্ধ করতে বললেন। ততক্ষণে ব্যাংকের অফিসাররা অনেকটা হতভম্ব ও সম্মোহিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বাঁশিওয়ালা বাঁশি বাজাতে বাজাতে ব্যাংকের ক্যাশ সেকসনের ভেতরে ঢুকে পড়লো। সে হেড ক্যাশিয়ারের টেবিল থেকে ভল্টের চাবিগুলো নিয়ে ভল্টের দিকে এগিয়ে চলল। এমন সময় টোকন মামা ও অপু দুদিক থেকে বাঁশিওয়ালাকে আক্রমণ করল। অপু ফ্লায়িং কিক মেরে বাঁশিওয়ালাকে মেঝেতে ফেলে দিল। বাঁশিওয়ালা দ্রুত উঠে টিয়ানার দিকে পিস্তল তাক করে ওকে সামনে টেনে মানব ঢাল তৈরি করল। 

তারপর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা চেঁচিয়ে বলল, তোমরা কেউ এগুতে চেষ্টা করলে ওকে গুলি করে মেরে ফেলব। এ কথা বলে সে টিয়ানাকে টানতে টানতে ভোল্টের দিকে এগিয়ে চলল। তার উদ্দেশ্য ভল্ট থেকে টাকা বের করে নিয়ে টিয়ানাকে কাভার বানিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া। বাঁশিওয়ালার চোখ সাবধানে টোকন মামা, অপু ও তিয়ানের দিকে নিবদ্ধ। আচমকা টিয়ানা একটু নিচু হয়ে দুই হাতে বাঁশিওয়ালার পিস্তলে আঘাত করল। পিস্তলটা উড়ে কয়েক হাত দূরে পড়ল। তিয়ান এগিয়ে এসে প্রচণ্ড জোরে বাঁশিওয়ালার চোয়ালে ঘুসি বসিয়ে দিল। তিয়ান ব্যায়াম করা বলিষ্ঠ এক কিশোর। তার ঘুসি খেয়ে হ্যামিলনের সেই রহস্যময় বাঁশিওয়ালা জ্ঞান হারালো। একটু পড়েই টোকন মামার ফোন পেয়ে পুলিশ এলো। পুলিশের এস আই  ম্যাক্স মুলার কালকেও অর্নেট গ্রান্ড জুয়েলারিতে টোকন মামা ও কিশোর দলকে দেখেছিলেন। তিনি আজকে এগিয়ে এসে তাদের সঙ্গে পরিচিত হলেন। অপু বলল, আমরা তিন কিশোর-কিশোরী গোয়েন্দা দল গঠন করেছি। এই দলের নাম কিশোর দল। 

আমরা সারা বিশ্বে ঘুরে রহস্য সমাধান করি আর অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়াই। বেশিরভাগ অভিযানে টোকন মামা আমাদের সঙ্গেই থাকেন। টোকন মামা তখন পুলিশ চিফ ম্যাক্স মুলারকে বললেন, আমার বিশ্বাস বাঁশিওয়ালার বাঁশিতে কোনো জাদু নেই, নিশ্চয়ই সে বাঁশি কে স্প্রে হিসেবে ব্যাবহার করে চেতনানাশক ওষুধ ছড়িয়ে সবাইকে এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ফেলে এই অপরাধগুলো করে।

যা হোক, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এনে বাঁশিটা পরীক্ষা করতেই টোকন মামার সন্দেহের সত্যতা প্রমাণিত হলো। বাঁশির ভিতরের কনটেইনারে লাইসারজিক এসিড ও ডায়েথিলামাইডের সংমিশ্রণে তৈরি একটি শক্তিশালী চেতনা নাশক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ওষুধ রয়েছে। এই ওষুধের সাহায্যেই সে সবাইকে সম্মোহিত করে লুটতরাজ চালাত। এরপর বাঁশিওয়ালার মুখোশ পরীক্ষা করে দেখা গেল, মুখোশটির সঙ্গে আধা ঘণ্টা চলার উপযোগী অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত আছে।  ফলে তাকে  ওষুধ যুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে হয় না। ইতোমধ্যে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার জ্ঞান ফিরে এসেছে। সে চোখ পিটপিট করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। 

পুলিশ চিফ ম্যাক্স মুলার টোকন মামা ও কিশোর দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে, হ্যামিলনের সেই ভণ্ড বাঁশিওয়ালাকে পিছমোড়া করে বেঁধে থানায় নিয়ে চলল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানার মাথা তখন কিছুটা ঝিমঝিম করছিল। কারণ কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে থাকলেও চেতনা নাশক ওষুধের সম্পূর্ণ প্রভাব থেকে তারা মুক্ত হতে পারেনি। তারা তাড়াতাড়ি ভোক্স ওয়াগন গাড়িতে চড়ে ড্রাগন হিরো ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে পৌঁছে ঘুমিয়ে পড়লো। 

পরের দিন টোকন মামা ও কিশোর দলের সদস্যরা সুস্থ শরীরে হ্যানোভার শহরে ফিরে গিয়ে বিমান যোগে রওনা দিল মাতৃভূমি বাংলাদেশের উদ্দেশে।

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা   কিশোর  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close