সাখাওয়াত ও রুবাইয়াত দুই বন্ধু। তারা শিকারির ছেলে। শিশুকাল থেকে তীর ধনুক তাদের নিত্যসঙ্গী। দুজনই খুব ভালো শিকার করত। সাখাওয়াত ছিল অনেক বাচাল আর লোভী, আর রুবাইয়াত অনেক সহজ-সরল।
সাখাওয়াতের কথা মতো চলতো রুবাইয়াত। তারা রোজ শিকারে যেত। জঙ্গল থেকে শিকার করে এনে বাজারে বিক্রি করত। বিক্রি করে দুজনেই সমানভাগে টাকা ভাগাভাগি করত। প্রতিদিনের মতো তারা আজকেও শিকারে বেরিয়েছে। শিকার খুঁজতে খুঁজতে তারা গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বেলা বারোটা বেজে গেল অথচ এখনো কোন শিকার পায়নি। সাখাওয়াত রুবাইয়াতকে বলল, ‘বন্ধু! তুই একদিকে যা আমি অন্যদিকে যাই, তাহলে হয়তো কোনো কিছু জুটবে’।
সাখাওয়াতের কথা মতো রুবাইয়াত অন্যদিকে চলে যায়। সাখাওয়াত সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর দুজনেই আবার একই স্থানে মিলিত হলো। সাখাওয়াত শিকার করে আনলো দুইটি হরিণ। রুবাইয়াত এলো শূন্য হাতে। রুবাইয়াতের শূন্য হাত দেখে সাখাওয়াত হিংসায় জ্বলে উঠল। সাখাওয়াত রুবাইয়াতের সঙ্গে ভালো আচরণ করছে না। রুবাইয়াত তা লক্ষ্য করলেও কিছুই বলছে না। সে চুপচাপ। একটু পর বলল, ‘চল, আজকে যা পাইছি তা নিয়ে বাজারে যাই। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে। সাখাওয়াত মুখ ফুলিয়ে বাজারের দিকে চলতে থাকে। বাজারে এসে হরিণ দুটি বিক্রি করল। প্রতিদিন টাকা ভাগাভাগি করার জন্য বাজারের বটতলায় বসে, কিন্তু আজকে বসল না। রুবাইয়াতকে অল্প টাকা দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিল। রুবাইয়াত তাকে কিছুই বলল না। সে বাজার থেকে চাল ডাল নিয়ে ঘরে ফিরে যায়।
পরের দিন সকালে দুজন আবার শিকারে গেল। আজ রুবাইয়াত ও সাখাওয়াত দুটি করে হরিণ শিকার করল। রুবাইয়াত তার দুটি হরিণ নিয়ে আসলো, কিন্তু সাখাওয়াত তার শিকার করা হরিণ দুটি লুকিয়ে রাখল। সে বলল, ‘আজকে কোনো শিকার পাইনি’।
রুবাইয়াত বলল, ‘সমস্যা নেই। আজ আর শিকার করব না। চল বন্ধু বাজারে যাই’। বাজারে গিয়ে হরিণ দুটি বিক্রি করল। বটতলায় বসে সমানভাগে টাকা ভাগাভাগি করল। সাখাওয়াত বলল, ‘বন্ধু তুই বাড়ি চলে যা। আমি একটু পরেই যাব’। রুবাইয়াত বাড়ি চলে যায়, কিন্তু সাখাওয়াত তার সঙ্গে প্রতারণা করে আবার জঙ্গলে যায়। তার লুকিয়ে রাখা হরিণ দুটি নিয়ে আবার বাজারে এলো এবং তা বিক্রি করল।
এভাবে সে রোজ রোজ রুবাইয়াতকে ধোকা দিত। মিথ্যা বলতো। চারটি শিকার করলে তিনটি লুকিয়ে রাখত। এসব রুবাইয়াত বুঝতে পারলেও কিছুই বলত না লজ্জায়। একদিন শিকার বিক্রি করার পরে রুবাইয়াতকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিল। তারপর সে আবার জঙ্গলে গেল। ঐদিন তিনটি হরিণ লুকিয়ে রেখেছিল। যখনই সে হরিণগুলো নিতে গেল, বাঘের গর্জনে সারা জঙ্গল থরথর করে কেঁপে উঠল। সাখাওয়াত কিছু করার আগেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র বাঘ। মুহূর্তের মধ্যেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলে তার শরীর।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেল। সাখাওয়াত এখনো বাড়ি ফিরল না। সাখাওয়াতের মা এলো রুবাইয়াতের ঘরে। বলল, ‘বাবা! সাখাওয়াত তো এখনো ফিরল না’।
রুবাইয়াত বলল, ‘কি বলেন খালা! সে তো অনেক আগেই ফেরার কথা’।
রুবাইয়াত ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের সবাইকে জড়ো করল। সবাই আগুনের মশাল জ্বালিয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করল। তাকে খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল গ্রামবাসী। হঠাৎ দেখে, তিনটি মৃত হরিণের পাশে ছিন্নভিন্ন দেহে সাখাওয়াত। রুবাইয়াত অশ্রুসিক্ত চোখে মাটিতে বসে গেল। সে বুঝতে পারল সাখাওয়াতের পরিণতি।
কেকে/এমএ