সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান তিন নম্বর রোডে রাতে দেশীয় অস্ত্রে সংঘটিত এক নৃশংস হামলায় আবুল কাশেমের ছেলে বিল্লাল হোসেন বাবু (২৬) নিহত হয়েছেন। বাবা আবুল কাশেমও গুরুতর আহত অবস্থায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পরিবার জানায়, এখনো বাবাকে ছেলের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি। ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের পর তাদের গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জে দাপন করা হয়েছে।
পিস্তল নয় আগ্নেয়াস্ত্র নয়, সামুড়াই দেশীয় অস্ত্র কারো কাছে থাকলে সেই নিজেকে অস্ত্র ধারী সন্ত্রাস মনে করে। তারা মনে করে পুরো এলাকা তাদের। তুচ্ছ ঘটনাকেও কেন্দ্র করে মানুষকে খুন করা হচ্ছে। এ যেনো পান থেকে চুন খসলেই দেশীয় অস্ত্রের মুখে মানুষের জীবন শেষ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬.৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা উদ্যান ডি ব্লকের একটি সেলুনের সামনে পূর্ব শত্রুতার জেরে ২০–২৫ জনের একটি দল আবুল কাশেম ও তার ছেলে বাবুর ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, হামলাকারীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা-ছেলেকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত বাবা-ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন। ফোর ব্রাদার্স গার্মেন্টসের সামনে পৌঁছানোর আগেই বাবুর মৃত্যু হয় বলে জানান নিহতের বোন শ্রাবণী। মৃত্যুর আগে বাবু শুধু বলতে পেরেছিলেন, “বোইনা, আমাকে ক্ষমা করে দিস—আমি বাঁচব না।”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাশেমের বাসার গেট, দেয়াল ও ফ্লোরজুড়ে এখনো রক্তের দাগ। কাশেমের স্ত্রী পারভীন সাংবাদিকদের জানান, যারা হামলা করেছে তাদের বেশিরভাগকেই তারা চিনতে পেরেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন—রাজীব, সবুজ, নাটা সুজন, রুবেল, মোহন, মঈনুলসহ আরও কয়েকজন।
পারভীন জানান, এলাকার ফল ব্যবসায়ী সোহেলকে দেওয়া ঋণকে কেন্দ্র করে সবুজের সঙ্গে সোহেলের বিরোধ চলছিল। কয়েকদিন আগে এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই ঘটনার মধ্যস্থতা করেছিলেন আবুল কাশেম। ঘটনার দিন সোহেল কাশেমের বাড়িতে ছিলেন বলেই প্রাণে বেঁচে যান বলে জানান তিনি।
কাশেমের মেয়ে শ্রাবণী বলেন, “বাবাকে কোপাতে দেখে আমার ভাই দৌড়ে গিয়ে বাবাকে বাঁচাতে চেয়েছিল। তখন ওরা বাবাকে ছেড়ে ভাইকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে দেয়। ভাই আমার মুরগির মতো ছটফট করছিল।”
ঘটনার পর কাশেমের স্ত্রী পারভীন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন, মামলা নং (৮৫) দায়ের করেন। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন—
১. মো. রাজিব হাওলাদার (২৬)
২. মো. ইকবাল হোসেন সবুজ (৪২)
৩. মো. রুবেল (৩০)
৪. মো. মোহন (৩৩)
৫. নাটা সুজন (৪২)
৬. মো. মঈনুল (৩৫)
মামলায় তিনি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ছেলে বিদেশে যাবে, মেয়েও ইটালি যাবে এগুলো শুনে তারা ভেবেছে আমাদের অনেক টাকা পয়সা হয়েছে, তাই তারা চাঁদা চেয়ে খুব ডিস্টার্ব করতো। সম্ভবত টাকা না পেয়েেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে ওরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জানান, ঘটনার দিন, বিকাল ৪ টার দিকে ঢাকা উদ্যানের ৪ নং সড়কে বিকাল ৪ টার দিকে প্রথমে কাশেমের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হয়, সেই ঝামেলা থেকে সন্ধ্যার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। তখনই তার ছেলে বাবু এবং তার সঙ্গে সোহেল নামে এক লোকের দেনাপাওনা নিয়ে মারামারি হয়।
তারা আরো বলেন ,সোহেল নামে এক ফল ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেয় সবুজ সেই টাকার মাত্র ৩ হাজার টাকা পেতে পারে। সেই টাকা নিয়ে সোহেলের সঙ্গে সবুজের দ্বন্দ্ব চলছিল। কয়েকদিন আগে সবুজ ওই সুদের টাকার জন্য সোহেলকে ধরে আনে। পরে আবুল কাশেম ঘটনার মধ্যস্থতা করে কয়েক দিনের সময় নিয়ে সবুজের কাছ থেকে সোহেলকে ছাড়িয়ে আনেন। ঘটনার দিন সোহেল কাশেমের বাড়িতেই ছিলো। সোহেল বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয়, ওই সময়ে সোহেল রাস্তায় থাকলে তাকেও কোপাতে থাকে।
মামলার আসামিরা ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এই ঘটনায়" মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজ খেলা কাগজকে জানান, “আমরা মামলা গ্রহণ করেছি এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব ও ডিবি যৌথভাবে আসামি ধরতে মাঠে নামছে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই আসামিদের আটক করা সম্ভব হবে।”
স্থানীয়দের অনেকেই বলেন, “এভাবে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে খুনোখুনি চলতে পারে না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন মানুষকে এলাকাবাসীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা ভয়ংকর অমানবিকতা। আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।”
দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যার বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন মানুষ অল্পতেই রেগে যাচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ সামাজিকভাবে প্রচার করতে হবে কোন অপরাধে, কি সাজা হতে পারে। এছাড়া সামাজিক ও মানবিক বিষয়গুলো প্রচারণা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘন ঘন টহল দিতে হবে। এক অপরাধীর আইনগত শাস্তি হলে তা প্রচার করতে হবে। যাতে করে অন্য কেউ একই অপরাধ না করে।
কেকে/লআ