পশু-প্রাণী কামড়ালে বা আঁচড় দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন হয় জলাতঙ্কের টিকা। জলাতঙ্কের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে কামড়ানোর প্রথম দিন থেকে পর্যায়ক্রমে চারটি টিকা নিতে হয় রোগীকে। কিন্তু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রোগীর প্রাণ রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি এই জলাতঙ্কের টিকা সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে বেশি দামে কিনে টিকা নিচ্ছেন রোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় অর্ধমাস ধরে বন্ধ রয়েছে বিনামূল্যের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা। ফলে কুকুর বা বিড়াল কামড়ালে সেবা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী রোগীরা। হাসপাতালে জলাতঙ্কের সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সেবাটি বিনামূল্যে পাওয়র কথা থাকলেও এই হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফার্মেসি থেকে টিকা সংগ্রহ করে এনে দিলেই তা পুশ করে দেয়া হচ্ছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) পর্যন্ত ১২৩ জন রোগী ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে এনে জরুরি বিভাগ থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য সেবার প্রধান ভরসা ৫০ শয্যার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো প্রতিষেধক ভ্যাকসিন না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী দিহান আহমেদ জানান, আমার ৬ বছর বয়সী ভাইকে বিড়ালে কামড়ালে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করি। তারা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেই বলে জানিয়ে দেয়। পরে আমাকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে। হাসপাতালে সরবরাহ থাকলে আমার টাকাগুলো বাড়তি খরচ হতো না।
রাজঘাট চা-বাগানের আহত পার্থ মন্ডল বলেন, বাড়ি থেকে শহরে যাবার পথে আমি একটি বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণের শিকার হই। পরে লোকজন লাঠি দিয়ে কুকুরটি তাড়িয়ে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন নিতে পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় আমি ফার্মেসি থেকে বেশি দাম দিয়ে ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে।
সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের নাসিমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে বাড়ির সামনে হঠাৎ একটি কুকুর কামড় দিয়ে আহত করে। পরে ছেলেকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে বলা হয় ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে। বাধ্য হয়েই এতো টাকা খরচ কওে ভ্যাকসিন কিনি।
সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বাজারে জলাতঙ্কের সাধারণ ভ্যাকসিনের দাম ৫০০ টাকার কাছাকাছি। একটি ডোজ দিয়ে চারজন ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে গভীর ক্ষত হলে ব্যবহৃত আরআইজি ভ্যাকসিনের দাম প্রায় ১ হাজার টাকার মতো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালটেন্ট ডা. বিশ্বজিত দেব জানান, কুকর-বিড়ালে সামান্য ক্ষত হওয়া রোগীদের অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) ও গভীর ক্ষত হওয়া রোগীদের র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন (আরআইজি) ভ্যাকসিন দেয়া হয়। এই ভ্যাকসিন রোগীর ২০-২৫ কেজি ওজনভেদে এক ডোজ ক্ষত স্থানের চারপাশে দেয়া হয়। কোনো রোগীর ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তাহলে তাকে চার থেকে পাঁচটি ডোজ ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে সাধারণ কামড়ানো বা আঁচড়ানো রোগীদের পরীক্ষার পরে ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেয়া হয়।
রোগীর ক্যাটাগরি দেখে ডোজ কতবার বা কতদিন পর দিতে হবে সেটি নির্ধারণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, হাসপাতালে র্যাবিস ভ্যাকসিন না থাকায় কয়েকদিন ধরে রোগীদের এ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে এবং চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ভ্যাকসিন পেলে আবারো বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হবে।
কেকে/লআ