আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় নেমেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। দলকে বিজয়ী করতে যেন মরিয়া নেতা-কর্মীরা।তবে এই প্রচারণায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে পেছনে ফেলে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ভোটের আগে গণভোটের দাবিতে দলটি (জামায়াত) আন্দোলনের মাঠে থাকলেও ভোটের মাঠ গোছাতে সবচেয়ে বেশি তৎপরও দেখা যাচ্ছে তাদেরকে। এমনকি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দলটির প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছে। গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি নিতে তারা যাচ্ছে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরের নির্বাচনি এলাকায় দেখা গেছে- আসনগুলোতে জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ভোটের প্রচারণা বলতে- ‘ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন’ এখন শুধু জামায়াতকেই দেখা যাচ্ছে। তবে এসব প্রচারণায় দলটি নিয়ম-নীতি মানছে না বলেও অভিযোগ তুলেন তিনি। তার ভাষ্য, জামায়াতপন্থি প্রার্থীরা প্রতিদিনই নির্বাচনি এলাকায় নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যা তুলনামূলকভাবে বিএনপির চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির এক নেতা জানান- অনেক এলাকায় দলটির অন্তঃকোন্দল এখনো রয়ে গেছে। আবার অনেক আসনে প্রার্থিতাও ঘোষণা করা হয়নি। এরমধ্যে আবার অনেক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে এখনো দলের নেতাকর্মীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভুগছে। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনি প্রচারণায়।
এদিকে দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে লাগামহীন-ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। এসব বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা সমালোচনা। সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্কেও তৈরি হয়েছে। তিনি দলীয় এক সমাবেশে বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসনে জামায়াত প্রার্থী ও দলটির চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে প্রশাসনকে, প্রশাসনের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে, ওসিকে আমাদের পেছনে ছুটে আসতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না। প্রশাসনকে আমাদের কথায় উঠতে, বসতে হবে, মামলা দায়ের করবে, গ্রেফতার করবে।’ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, নুরুল আমিন (নগরের সেক্রেটারি) ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার জামায়াতকে ক্ষমতায় নিতে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’
তবে নিজের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি যে বক্তব্যটা রেখেছি সেটা হলো- আমাদের প্রশাসন দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের স্বার্থে পুলিশদের কাজ করতে হবে আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যারা আমার এই খণ্ডিত বক্তব্যকে শুধু জামায়াতে ইসলামীকে চিহ্নিত করছেন আমার মনে হয় তারা ফ্যাসিস্টদের উসকানি দিচ্ছেন।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এই বক্তব্য তার (শাহজাহান চৌধুরী) ব্যক্তিগত। এটা জামায়াত ইসলামী সমর্থন করে না।
এদিকে সভা-সমাবেশে মোটরসাইকেল শোডাউনের ফলে পথচারীদের দুর্ভোগ এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে। সাম্প্রতিক সাতক্ষীরায় দলটির শোডাউনের সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ ব্যক্তি মারা গেছেন। ২২ নভেম্বর সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বাদামতলা বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে- সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মোটরসাইকেল শোডাউনের সময় ফজর আলী (৭৩) নামে এক বৃদ্ধ মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হয়ে মারা যান। যার প্রেক্ষিতে সারা দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল বা মোটরগাড়ি শোডাউন না করতে দলটির নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কেকে/এআর