লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর চিত্র | ছবি : খোলা কাগজ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে যে কেউ মনে করতে পারে এটি একটি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। বাস্তবে এর ভিতরের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই সামনে আসে অপরিচ্ছন্নতা, দায়িত্বহীনতা ও অমানবিক আচরণের এক নগ্ন চিত্র। হাসপাতালের ওয়ার্ডে পা রাখার সঙ্গেই নাকে আঘাত করে দুর্গন্ধ। মেঝে নোংরা, বেডের নিচে জমে থাকা আবর্জনা দেখে মনে হচ্ছে যেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা টয়লেটগুলোর। এতটাই নোংরা ও দুর্গন্ধময়—সুস্থ মানুষ ঢুকলে অসুস্থ হয়ে বের হওয়ার আশঙ্কা।
এক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এটা হাসপাতালে থাকার মতো পরিবেশ না—বরং নোংরা ভাগাড়ের মতো অবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের রুক্ষ আচরণ।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর টয়লেটের চিত্র | ছবি : খোলা কাগজ
আরো অভিযোগ আছে, স্টাফরা চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন—রোগী বা স্বজনরা কিছু জানতে চাইলে বিরক্তি দেখান। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অশোভন আচরণের শিকার হতে হয়। রাতের শিফটে দায়িত্বে থাকা স্টাফদের উদাসীনতা রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরের সৌন্দর্য করে রাখা হলেও ভেতরের বেহাল অবস্থা নিত্যদিনের বাস্তবতা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি এভাবে অবহেলা করা শুধু অনৈতিকই নয়—আইনগতভাবেও দণ্ডনীয়। তারা অবিলম্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, স্টাফদের আচরণগত প্রশিক্ষণ ও দায়িত্বশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর চিত্র | ছবি : খোলা কাগজ
লোহাগাড়াসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রটি এমন অবস্থায় চলতে পারে না—এমন অভিযোগ এখন সাধারণ মানুষের। তারা দ্রুত শৃঙ্খলা ও সেবার মানোন্নয়নের দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন। বাহিরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও ভিতরে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, মেট্রোনিডাজল ও খাওয়ার স্যালাইন ছাড়া আর কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, “প্রতিদিন সকালে আমরা টয়লেটগুলো চেক করি। কিন্তু যিনি টয়লেটগুলো পরিষ্কার করে তিনি দুইদিন থেকে অসুস্থ। এজন্য একটু সমস্যা হচ্ছে। স্টাফ এবং নার্সরা যাতে রোগীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে—আমরা প্রায় সময় ওদেরকে এ ব্যাপারে কাউন্সিলিং করি এখন এই ওপারে সতর্ক হব।”