সারা দেশের মতো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবি বাস্তবায়ন ও শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে, উপজেলার ১৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল এ কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।
দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধীতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, অফিস কক্ষে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছে। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী আবার বাড়ি ফিরে গেছে। কোন কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়েই আসেনি।
জানা গেছে, গত শনিবার একটি বাসে করে ঈশ্বরগঞ্জের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪২ জন সহকারী শিক্ষক রাজধানীর শাহবাগের আন্দোলনে অংশ নেন। পুলিশের হামলায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঈশ্বরগঞ্জের পাঁচজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আল-আমিন, কর্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক, মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ্ শরিফ, বিলরাউল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, বড়ডাংড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাহবুব আলম।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির খবর পেয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাননি। রোবরবার স্কুলে ক্লাস করতে এসে শিক্ষকদের কর্মবিরতি দেখে অনেক শিক্ষার্থী ব্যাগ কাধে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা করে বাড়ি চলে যাচ্ছে। এতে আসন্ন বার্ষিক ও পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা।
ক্লাস না হওয়ায় ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থী
তায়্যিবা, অনন্যা, রনি জানায়- স্কুলে এসে দেখি ক্লাস বন্ধ। আমরা কিছুক্ষণ খেলাধুলা করে বাসায় চলে যাচ্ছি।
হাসিম উদ্দিন ও নূরুল আলমসহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘বছরের শেষ সময়ে এমন কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ নষ্ট করবে। তার প্রভাব পরীক্ষাতেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ধীতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ এনামুল হক ও ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কোহিনুর বিলকিস, লীনা পারভীন ও শামছুন্নাহার বলেন, ‘দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবি বাস্তবায়ন ও শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে।’
গত শনিবার আন্দোলনে অংশ নিয়ে শাহবাগে রাজধানীর আহত হন ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আল-আমিন।
তিনি বলেন, ‘ন্যায অধিকার আদায়ে শাহবাগে শিক্ষকদের ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচিতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে বহু শিক্ষক আহত হন। আমিসহ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাঁচজন শিক্ষক গুরুত্বর আহত হয়েছেন। যেহেতু শিক্ষকদের শরীরে রক্তের দাগ লেগেই গেছে, তাহলে দশম গ্রেড আদায় করেই এই দাগ মুছবো। এতে শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যে আমরা পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করেছি। দাবি আদায় হলে প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের পড়া কভার করে নিবো।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন না করতে সেন্ট্রাল থেকে আমাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে। যদি কোন শিক্ষক নির্দেশনা না মেনে কর্মবিরতি পালন করে সেক্ষেত্রে আমরা তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
বছরের শেষ মুহুর্তে এসে শিক্ষকদের কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বছরের শেষ মুহুর্ত, তাই এখন ক্লাস না হলে তো শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’
কেকে/ এমএ