বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
হাঁসের প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন
মোহাম্মদ রিয়াজ হোসাইন, বাকৃবি
প্রকাশ: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:২৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

নেত্রকোণার নারী উদ্যোক্তা আঞ্জুয়ারা। একসময় চাকরির সন্ধান করলেও এখন গ্রামের কয়েকজন অসহায় নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বাড়ির এক কোণে ছোট্ট ঘরে শখের বসে ৫০টি হাঁস দিয়ে খামারের শুরু। বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। খামারের উপার্জিত অর্থে চলছে সন্তানের লেখাপড়া ও সংসার। তবে সম্প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের মধ্যে এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হঠাৎ হাঁসগুলো ছটফট করে মারা যাচ্ছে।

এ ছাড়া হাঁসগুলো খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিচ্ছে, রক্তমিশ্রিত পায়খানা করছে, পালক এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঝিমিয়ে থাকছে এবং ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। ফলে আঞ্জুয়ারাকে এখন খামারে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

নেত্রকোণা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, হাঁসগুলোর মধ্যে মরণঘাতী হাঁসের প্লেগ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। আক্রান্ত হাঁসের ব্যবহৃত পানি, খাদ্যদ্রব্য ও খামারের যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে অন্য হাঁসও সংক্রমিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে প্লেগে আক্রান্ত অসুস্থ হাঁস কেনাবেচার মাধ্যমে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়ও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খামারিদের এই সমস্যা বিবেচনা করে দীর্ঘ গবেষণার পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান হাঁসের প্লেগ রোগের নতুন দুই ধরনের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন। ভ্যাকসিন দুটি হলো—ইনঅ্যাক্টিভেটেড (নিষ্ক্রিয়) ও লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড (দুর্বল অণুজীব) ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন হাঁসে একবার প্রয়োগ করলে ৬ মাস পর্যন্ত প্লেগের জীবাণু সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে। পরবর্তী বুস্টার ডোজ প্রয়োগের মাধ্যমে পুরো খামারকে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের এই প্রকল্পটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অর্থায়ন করেছে। খামারিদের কাছে দ্রুত এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি ভ্যাকসিনের সিড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতি হাঁসের ভ্যাকসিনের খরচ মাত্র ২ টাকা, যা খামারিদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী।

হাঁসের এই প্লেগ রোগের সংক্রামণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রথমে দুই সপ্তাহ বয়সে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। পরবর্তী ৬ সপ্তাহ বয়সে আরেকবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। এরপর ৬ মাস পরপর ভ্যাকসিন দিলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও এই রোগের সংক্রামণ প্রতিরোধের জন্য হাঁসের সঠিক ব্যবস্থাপনাও জরুরি।

২০২৩ সালের ৭ মার্চ হাঁসের প্লেগ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়। এর সময়সীমা ২০২৬ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও মান আরো উন্নয়নের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষক।

হাঁসের প্লেগ রোগটি হারপেসভিরিডি পরিবারের এক ধরনের ডিএনএ ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। ১৯২৩ সালে বাউডেট নামক নেদারল্যান্ডসের এক বিজ্ঞানী প্রথম এ রোগটি শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে ভারতবর্ষেও এই রোগের জীবাণু শনাক্ত হয়। হাঁসের প্লেগ রোগটি ডাক এন্টারাইটিস নামেও পরিচিত, কারণ এই ভাইরাসটি হাঁসের পরিপাকতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, “হাওর অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি ডাক কলেরা ও ডাক প্লেগ রোগের ভয়াবহতা। খামারে হাঁসের মধ্যে ডাক কলেরা ও ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরও ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে। এটি আমাকে একটি নতুন ও কার্যকর প্লেগ ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করেছে। প্রান্তিক খামারিরা এই ভ্যাকসিনের জন্য বারবার অনুরোধ করতেন। চোখের সামনে হাঁস ছটফট করে মারা যেত। এই রোগের বিস্তার রোধে আমরা এই উদ্ভাবনে কাজ করেছি। আমরা আগে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতাম, এখন ভাবছি জীব নিরাপত্তা নিয়েও ভাবছি।’’

‘‘দেশের যত উদ্ভাবন হয়েছে, তার পেছনে বাকৃবির অবদান বিশাল। খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কৃষির প্রতিটি অগ্রগতিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমার গবেষণাও এমন একটি প্রচেষ্টা, যা থেকে অন্যরা অনুপ্রেরণা পাবে। বাকৃবিতে অনেক মেধাবী ও দক্ষ গবেষক রয়েছেন, যারা যথাযথ ফান্ডিং পেলে আরও বড় সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।”

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “বাংলাদেশের লাইভস্টক সেক্টরের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে দুটি বিষয়ে- প্রজনন ও ভ্যাকসিন। এই দুটি ক্ষেত্র ছাড়া দেশের প্রাণিসম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ খাত দুটিতে সরকারের বিনিয়োগ এখনো খুবই সীমিত। অথচ যদি প্রজনন ও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকত, তাহলে বাংলাদেশের লাইভস্টক সেক্টরকে রপ্তানিমুখী করা সম্ভব হতো।’’

‘‘আমি বিশ্বাস করি, এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা অত্যন্ত ভালোভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং কন্ট্রোল ও ট্রিটমেন্ট গ্রুপের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়েছে। সবগুলো ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করে ভ্যাকসিনটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।”

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  হাঁসের প্লেগ রোগ   ভ্যাকসিন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা
গাজীপুরে রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও অবকাঠামো সংকট, চরমে দুর্ভোগে বিয়ানীবাজারবাসী
আবুল সরকারকে মুক্তি দিলে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা মাদানীর

সর্বাধিক পঠিত

নাটোর-১ আসনে এবি পার্টির প্রার্থীর বিলবোর্ড ভাঙচুরের অভিযোগ
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
থাইল্যান্ডে যাচ্ছে তরুণ উদ্ভাবক দল সায়েন্স অ্যান্ড রোবটিকস ক্লাব
ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close