বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজবের ছড়াছড়ি
রোকন উদ্দিন
প্রকাশ: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:১৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দেশের অনলাইন জগৎ তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন যেন এক নতুন ‘তথ্য যুদ্ধের ময়দান’। এখানে প্রতিদিনই ছড়িয়ে পড়ছে কোনো না কোনো গুজব। দিন দিন বাড়ছে ভুয়া ফটোকার্ড এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সৃষ্ট ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা। যেখানে মিথ্যাই হয়ে উঠছে প্রচারের হাতিয়ার, আর সত্য হারিয়ে যাচ্ছে গুজবের আড়ালে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে বিতর্কিত করা, কিংবা কোনো ইস্যুতে জনমতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইনে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসবই যেন বিশ্বাসযোগ্যতার ছদ্মবেশে ছড়ানো এক বিভ্রান্তির ফাঁদ। 

এসব গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। সংঘাত ও হানাহানির আশঙ্কাও বাড়ছে। পাশাপাশি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতিসংক্রান্ত ভুয়া তথ্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে যথার্থ পদক্ষেপ নিতেও  দেখা যাচ্ছে না।  

অনেকেই বলছেন, সরকারের নীরবতা, উদাসীনতা ও কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে এ ভুয়া তথ্য ও এআইভিত্তিক অপপ্রচার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক যোগাযোগব্যবস্থার জন্য এক বড় হুমকি। এর ফলে সত্য-মিথ্যার সীমারেখা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, আর তার জায়গা নিচ্ছে এক ভয়াবহ মিসইনফরমেশন ইকোসিস্টেম, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতি ও সামাজিক সংহতির জন্য এক বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও ক্যানভা বা ফটোশপের মতো বিভিন্ন অনলাইন টুলস হাতে থাকায়, এখন যে কেউ কয়েক মিনিটেই বানিয়ে ফেলছে এমন ভুয়া কার্ড, ছবি, অ্যানিমেশন এবং এমনকি ছোট ভিডিও, যা দেখে প্রথমেই বিশ্বাস করে ফেলে যে কেউ। 

এ ছাড়া একে অপরকে ঘায়েল করার নামে ব্যক্তিগত কিংবা মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আদলে গড়ে ওঠা শত শত ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এ ‘ভুয়া কার্ড ছড়ানো’ সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির ডিজিটাল প্রচার বেড়েছে। তাতে সমর্থকদের চাঙা করতে বিভ্রান্তিকর তথ্যও ছড়ানো হচ্ছে। এ ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জগতে বড় উপস্থিতি রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগের। 

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- সাধারণ মানুষ এখন ধরতেই পারছে না, কোন কার্ডটি সত্য আর কোনটি সাজানো মিথ্যা। মূলধারার গণমাধ্যমের লোগো, রং, টাইপোগ্রাফি এমন নিখুঁতভাবে নকল করা হচ্ছে যে, মুহূর্তেই তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। ফলে মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞদের দাবি- অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মিডিয়া লিটারেসি সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, কর্মসংস্থান-শিক্ষা-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব না দেওয়া, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এবং সরকারের উদাসীনতার কারণে দিন দিন এসব অপপ্রচারের পরিমাণ বাড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তাদের দাবি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করা। প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে ধর্মীয় উপাসনালয়েও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘাঁটাঘাঁটি দেখা যায়, গত ৩ অক্টোবর ইকবাল টিভি নামক এক প্লাটফর্মের লোগো ব্যবহার করে বানানো একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে শেখ হাসিনার সৈনিক নামে এক পেজ। সেই কার্ডে লেখা- ‘ধাওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই: নির্বাচন হাইকমিশনার’। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউম্যার স্ক্যানার নামে একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান। সে অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি ওই বক্তব্য দেননি। 

এদিকে বাংলাদেশে আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতিসংক্রান্ত ভুয়া তথ্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট এ গবেষণা চালিয়েছে। গত রোববার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়। গবেষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে অনলাইনে জনপরিসর ভীষণভাবে ভঙ্গুর ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকে ভুয়া রাজনৈতিক তথ্য ছড়ানোর মাত্রা বাড়তে থাকে। তা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এটি নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা, সামাজিক স্থিতি এবং নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

নির্বাচন ঘিরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির ডিজিটাল প্রচার বেড়ে যাওয়ার দিকটি তুলে ধরে গবেষণাপত্রে বলা হয়, তাতে সমর্থকদের চাঙা করতে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্যও ছড়ানো হচ্ছে। আর এ ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জগতে বড় উপস্থিতি রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগের।

ডিজিটালি রাইট বলেছে, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিদেশি ও প্রবাসী একটি অংশও এক ধরনের ডিজিটাল প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কনটেন্ট, প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক এবং বাণিজ্যিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিকৃত ছবি, মনগড়া ভিডিও ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি কনটেন্ট নারী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নির্বাচনের আগে ভয়ভীতি, হয়রানি ও ভোটার দমন বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দল, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘিরে এআই সৃষ্ট অপতথ্য সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম ‘বাংলাফ্যাক্ট’। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্টারনেটে ছড়ানো এআই কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে নিয়ে প্রচারিত কনটেন্টগুলোর প্রায় সবকটিতেই দলটির ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সরকার ও বাহিনী (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) নিয়ে ছড়ানো এআই সৃষ্ট কনটেন্টগুলো ছিল মূলত নেতিবাচক।

বাংলাফ্যাক্টের তথ্যমতে, গত এক বছর ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং দেশটি থেকে পরিচালিত কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং এ দেশের বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। এসব ভুয়া তথ্যের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নেওয়া দল ও সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া শত শত ভুল তথ্য ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে বাংলাফ্যাক্ট। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধে কাজ করছে এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে সচেষ্ট রয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং ভুয়া তথ্য প্রচারের ঝুঁকি ঠেকাতে একটি সমন্বিত কেন্দ্রীয় সেল গঠন করার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। গত ২১ অক্টোবর রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক কর্মশালায় সিইসি বলেন, এআইয়ের মাধ্যমে তথ্য বিকৃতি, মিথ্যা প্রচার ও গুজব ঠেকাতে যে সেন্ট্রাল সেল গঠন করা হবে, সেটি ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে এবং তা দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সমাজ বিশ্লেষক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, অপ্রয়োজনীয় একটি জনগোষ্ঠী আপনা-আপনিই তৈরি হয়ে গেছে। আর তারাই অপতথ্য কাজে জড়াচ্ছে। তা ছাড়া আইনের প্রয়োগ না থাকা এ অবস্থাকে দিচ্ছে বেপরোয়া গতি।

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম   গুজব  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা
গাজীপুরে রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও অবকাঠামো সংকট, চরমে দুর্ভোগে বিয়ানীবাজারবাসী
আবুল সরকারকে মুক্তি দিলে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা মাদানীর

সর্বাধিক পঠিত

নাটোর-১ আসনে এবি পার্টির প্রার্থীর বিলবোর্ড ভাঙচুরের অভিযোগ
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
থাইল্যান্ডে যাচ্ছে তরুণ উদ্ভাবক দল সায়েন্স অ্যান্ড রোবটিকস ক্লাব
ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close