আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ঘোষণার পর থেকেই দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সমীকরণ তৈরি হয়। তবে কিছু কিছু আসনে অসন্তোষ দেখা যায়। এ সব আসনে বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ-ঐক্যের বন্ধন অটুট রাখা।
গত সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ২৩৭টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মনোনয়ন তালিকায় একদিকে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র নেতারা স্থান পেলেও, অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম ও তরুণ নেতাদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। তবে বাদ পড়েছেন অনেক ‘দীর্ঘদিনের মাঠের যোদ্ধা’।
দলের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার রাতেই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অসন্তোষ, বিক্ষোভ এবং ব্যানার ছেঁড়া-ছিঁড়ির ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন, কেউ আবার নীরবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দলীয় কার্যক্রম থেকে।
দলীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে মাঠের কর্মীরা অনেক দিন ধরে সংগ্রাম করছেন। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন এবার তাদের মূল্যায়ন হবে। কিন্তু কিছু সিদ্ধান্ত তৃণমূলে হতাশা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ ও বিভাজন কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে মাঠের লড়াইয়ে সংগঠনগত দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। মনোনয়ন বিএনপির জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, কৌশলগতও একটি চ্যালেঞ্জ। এখন দলটি যদি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ধরে রাখতে পারে, তাহলে এটি তাদের নির্বাচনি গতি বাড়াবে।
বিএনপি নেতারা অবশ্য বিষয়টিকে ‘স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’ বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রেখে যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনে যাবে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সমর্থন না পাওয়ায় দলটির নেতা আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তারা। এ ঘটনায় বিএনপি থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- সীতাকুণ্ড উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আহ্বায়ক মো. মামুন, যুবদলের সোনাইছড়ীর সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন।
তবে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক ও কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে উপজেলার হোসেনাবাদ হিসনা পাড়ায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউর রহমান মাছুম প্রফেসরের বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় হামলাকারীরা গালাগাল করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এছাড়াও শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকদের গোয়ালগ্রাম ও শেহালা বাজারের বিএনপি অফিস ভাঙচুর এবং উপজেলা চত্বরে থাকা ফেস্টুন ও পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দৌলতপুর সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে এটি দৌলতপুর বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা ভাঙচুর ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হও, গণতন্ত্র রক্ষা কর এমন নানা স্লোগান দেন।
দৌলতপুর উপজেলার আরো তিনটি বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুরের সময় বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ছিঁড়ে ফেলা হয়, ধানের শীষ প্রতীকসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের ওপরও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও কুষ্টিয়া-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শরিফ উদ্দিন জুয়েল খোলা কাগজকে বলেন, দলের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা হলে অবশ্যই দলের নির্দেশনা মেনে কাজ করে যাব।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তারা।
এদিকে অনিবার্য কারণবশত মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়েছে।
কেকে/এআর