চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নে রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে রাতের আঁধারে টিলা কেটে সাবাড় করার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ২৯ অক্টোবর (বুধবার) দৈনিক খোলা কাগজে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর, রোববার (২ নভেম্বর) কর্তনকৃত সেই টিলা পরিদর্শন করে সাতজনকে আসামি করে ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করে দপ্তরটি। তবে মামলাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক বিতর্ক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা ছাড়পত্র ব্যতিরেকে পাহাড়/টিলা কর্তনের অভিযোগে টিলার মালিক তাজুল ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল ও মো. রাসেল, জহুর আহমদের ছেলে মুহাম্মদ ওসমান, মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে মুহাম্মদ সাদ্দাম, মৃত মুহাম্মদ তওহিদের ছেলে মুহাম্মদ সজিব, মাস্টার হালিমের ছেলে মির্জা রুবেল এবং লিয়াকত আলী শিকদারের ছেলে সাদেক আলী শিকদারকে আসামি করা হয়েছে। তারা সকলেই পাইন্দং ইউনিয়নের বাসিন্দা।
তবে মামলার কপি প্রকাশের পর উপজেলাজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। মামলার ৩ নম্বর আসামি ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ওসমান বলেন, “আমি এসব টিলা কাটার কাজে জড়িত নই। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দাবি করছি।”
এদিকে মামলার ৬ ও ৭ নম্বর আসামি মির্জা রুবেল ও সাদেক আলী শিকদার, যারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, তারা বর্তমানে এলাকা ছাড়া। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ায় তারা লেখেন, “দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থাকতে পারি না, সেখানে টিলা কাটার প্রশ্নই আসে না। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। আমরা অপরাধ না করেও আসামি হয়েছি। এমন পদক্ষেপ পরিবেশ অধিদপ্তরের মতো রাষ্ট্রীয় দপ্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার পাইন্দং ছাড়াও দাঁতমারা, বাগানবাজার ও ভূজপুর ইউনিয়নে দিনরাত পাহাড় ও টিলা কাটা চলছে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর শুধুমাত্র পাইন্দংয়ে ‘দায়সারা’ অভিযান চালিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদেরও মামলায় জড়িয়েছে। এমনকি প্রকৃত দোষীদের সুকৌশলে বাদ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, “প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে নিরপরাধীদের আসামি করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে।”
এডভোকেট রাসেল আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, “যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাদের আসামি করা আইনের পরিপন্থী। তদন্তে নিরপেক্ষতা থাকা জরুরি।”
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “আমরা উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করেছি। তদন্ত শেষে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।”
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছিল।”
কেকে/ আরআই