ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এক শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে শাসানো এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে আন্দোলনে আল কুরআন বিভাগের বাইরের মেয়েদের বক্তব্য দিতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়তে শোনা যায় আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝিকে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘আব্দুল্লাহ বিন আসাদ’ নামে একটি আইডি থেকে ইবিয়ান ফ্যামিলি নামক ফেসবুক গ্রুপে প্রথমে ৪ মিনিট ৭ সেকেন্ডের অডিওটি পোস্ট হয়। পরে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি ভাইরাল হয়।
অডিও ক্লিপে শোনা যায়, তুমি কালকে এই মেয়েকে মাইক দিছো কেনো? এ মেয়ে কে? এই মেয়ের আল কোরআনে কি? মাইক দিছে কে ওর হাতে? ডিপার্টমেন্টকে ধ্বংস করছো না? বেশি বাড়ছো? ডিপার্টমেন্টকে ধ্বংস করার অধিকার কে দিছে তোকে? ওই মেয়ে যদি আমার ডিপার্টমেন্টের হতো আমার আপত্তি হতো না। কোন অধিকারে তুই আমার ডিপার্টমেন্টের ওপরে কথা বলিস।
অডিওতে আরো শোনা যায়, "তোরে আমি ডাকছি আন্দোলনের সময়? তোকে কে এত বড় সাহস দিছে যে তুই বিভাগের ওপরে কথা বলিস? কোথাকার কোন একটা মৃত পোলা, যাই হোক সে তো চইলেই গেছে। হাইয়ান, ইনসান না হাইয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। আমি আল কোরআনের টিচার, ওখানে আমার সাথে গেছে জিন্সের প্যান্টের সাথে গেঞ্জি পড়া মাইয়া। তোমার যদি যাইতে হয় আন্দোলনে যাও, কিন্তু আমার আন্দোলনের জায়গায় তোমার হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নাই।"
এছাড়াও অডিওতে কিছু কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে শোনা যায়।
এদিকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে এবং ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। নিন্দার ঝড় বয়ে যায় পুরো সামাজিক মাধ্যম জুড়ে।
সাবেক সহ-সমন্বয়ক সাজাতুল্লাহ শেখ লেখেন, "স্যারের মুখে এরকম বক্তব্য শুনে আমি ব্যথিত। সকল ছাত্রীই তো মেয়ের মত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে এরকম উচ্চারণ অযোগ্য শব্দ। আর বিভাগের শহিদ ছাত্রকে নিয়ে ওরকম তাচ্ছিল্য মন্তব্য না করলেও পারতেন স্যার। আহ সাজিদ।"
আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, "এমন উচ্চারণ একজন অধ্যাপকের মুখে শোভা পায় না। পুরো রেকর্ডটা প্রকাশ করা উচিত উনি কেন এমন রেগে গেলেন। কি কারণে, আর তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।"
নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেনো এমন মন্তব্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, "আসলে এই বিষয়টা নিয়ে তখন আমাদের ছাত্রের সাথে কথা হচ্ছিল। যে ছেলেটা মারা গেছে, সে এবং তার পরিবার একটা ধার্মিক ও আলেম পরিবার। সেদিন ছেলেটার বাড়িতে একটা মেয়ে গেছিল ঐভাবে যেটা তার পরিবারকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলেছিল। তাছাড়া কোনো মেয়ে গেলেও আমার আপত্তি ছিল না। যেহেতু ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে সবাই এইজন্য আপত্তি করা হয়েছিল। তবে তখন আমার প্রচণ্ড রাগ ও মাথা গরম থাকায় আমি এরকম বলে ফেলেছি। এমন শব্দচয়ন করা আমার ঠিক হয়নি, আমি তার জন্য দুঃখিত।"
কেকে/এআর