মৌলভীবাজারের রাজনগরে আকস্মিকভাবে ধসে পড়েছে মনু নদের তীরের বাঁধ। গণেশপুরে জনদুর্ভোগ। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক। ৯৯৬ কোটি টাকার প্রকল্পেও ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন।
গত বুধবার (২২ অক্টোবর) উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের গণেশপুর এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা যে কোনো সময় ভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারানোর ভয়ে আছেন।
মনু নদ খনন, তীররক্ষা বাঁধ সংস্কারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় চলমান রয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। তারপরেও থামানো যাচ্ছে না ভাঙন। প্রকল্প চলমান থাকলেও এসব ক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতি নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় মনু নদের বাংলাদেশ অংশে কুলাউড়া সদর উপজেলার মনুমুখ পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার করে দুই তীর মিলিয়ে মোট ১৪৪ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধের সংস্কার, গাইডওয়াল নির্মাণ, চর খননসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের ওই প্রকল্পগুলোর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০২১ সাল থেকে চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজ চলমান, এতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সফলতা নিয়ে শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত ৫ বছর থেকে ওই প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ৫৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তাজুদ মিয়া বলেন, ‘গত ২২ অক্টোবর রাত ৯টায় টেংরা ইউনয়িনের গণেশপুর এলাকায় বিকট আওয়াজ পেয়ে এলাকাবাসী ঘর থেকে বের হয়ে নদের কাছে গিয়ে দেখেন বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। আকস্মিক ধসে পড়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই নদের পাড়ে বসবাস করি। আমার একটি বাড়ি এই নদ নিয়ে গেছে, এখন আরেকটি বাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে।’
অপর বাসিন্দা রুহেল মিয়া বলেন, ‘বাঁধে ভাঙন বৃদ্ধির শঙ্কায় আমি গত বুধবার রাত থেকে আতঙ্কে আছি। যে কোন সময় এই ভাঙন বাড়তে পারে।’
স্থানীয়রা বলছেন, অধিক পরিমাণে এই নদ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সঠিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থান নির্ধারণে ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে এমনটি হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মনু নদের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৭টি স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এবং ব্লক বসানোর কাজ চলছে। গণেশপুর এলাকার এ স্থানটি কার্যাদেশ অনুযায়ী তীররক্ষা বাঁধ উঁচু করা হয়েছে।
নদের তীরবর্তী একামধু গ্রামের ইয়ারব মিয়া জানায়, ৪৮ শতক জায়গার মাঝে বাড়ি ছিল। তিনটি ঘরসহ বাড়ির সিংহভাগ মনুর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। অবশিষ্ট দুই-তিন শতক জায়গার ওপর কোনো মতে টিকে আছি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ বলেন, ‘মনু নদের মিটিপুর এলাকায় বিশাল চর জেগে ওঠায় বিপরীত দিকে গণেশপুর এলাকার তলদেশ গভীর হওয়ায় স্রোতের সঙ্গে মাটি সরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনার পর ভাঙনস্থল আমি এবং রাজনগর ইউএনও সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মনু নদের হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ৫৯% শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এই ভাঙন রোধে ব্লক বা জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঠিকাদার কাজ করে দেবে। ইতোমধ্যে মনু নদের ৬৭টি স্থানে জিওব্যাগ ও ব্লক বসানো হচ্ছে।’
কেকে/বি