রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শ্যামলী নূর মসজিদের জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। আনসার বাহিনীর সদস্যরা দাবি করছেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া জমি উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
জানা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল আনসার সদস্যদের জন্য আগারগাঁও এলাকায় ১০ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দের স্মারক নম্বর ২১১২৪ এএফ১৪/এ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার-২ শাখার স্মারক নম্বর ০৪২৫১৮ এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তবে এই জমির একাংশে ‘শ্যামলী নূর মসজিদ’ নামে বহু পুরনো একটি মসজিদ রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন জামাত ও জুমার নামাজ আদায় করেন হাজারো মুসল্লি। স্থানীয়দের দাবি, ২০০০ সালে সরকারি খাস জমিতে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানে ইবাদত করে আসছেন।
আনসার সদস্যদের অভিযোগ, জমি উদ্ধারে গেলে মসজিদ কমিটি বাধা দেয়। বাউন্ডারির তিন পাশের কাজ শেষ হলেও মসজিদ-সংলগ্ন অংশ নিয়ে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আনসার বাহিনী, মসজিদ কমিটি ও থানার ওসি ইমাউদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল—মেইন মসজিদের তিন কাতার রেখে বাকি অংশ আনসারদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মোজাহারুল ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০০৬, ২০১৩ ও ২০১৭, ২২ সর্বশেষ ২৫ সালে আমরা চার থেকে পাঁচ দফা জমি বরাদ্দের জন্য গণপূর্তে আবেদন করলেও কোনো অনুমোদন পাইনি। আমাদের অজান্তে বহু পুরোনো মসজিদের জমি আনসার সদস্যদের দেওয়া হয়েছে — এটা অন্যায়।”
তিনি আরও জানান, “নূর মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও প্রতি শুক্রবার কয়েক হাজার মুসল্লির জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ঈদের নামাজও এখানেই আদায় করা হয়। ৩–৪ কিলোমিটার এলাকায় এর বিকল্প কোনো মসজিদ নেই।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি ইমাউদুল ইসলাম বলেন, “এই জমিটি সরকার আগে পুলিশ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। পরে অবশিষ্ট অংশ আনসার বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয়। এখানে মসজিদের কোনো সরকারি মালিকানা নেই।”
সূত্র জানায়, আগারগাঁও এলাকার মোট ৩০ কাঠা জমির মধ্যে ২০ কাঠা ২০০৯ সালে পুলিশ এবং বাকি ১০ কাঠা ২০২৫ সালে আনসার বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, আগারগাঁও একসময় মোহাম্মদপুর থানার আওতায় ছিল। তখন পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের জন্য সরকার জমি দেয়। পরে সেখানে শেরেবাংলা নগর থানা গড়ে তোলা হয়। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এক স্থানে পুলিশ ফাঁড়ি ও থানা উভয় কীভাবে হয়?
এদিকে গত ৪ অক্টোবর মসজিদ উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে শ্যামলী নূর জামে মসজিদের পক্ষে স্থানীয়রা প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এতে প্রায় ২ হাজারের বেশি মুসল্লি অংশ নেন। এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়।
কেকে/ আরআই