বিক্ষোভে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়। বিক্ষুব্ধ জনতার স্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকা। সিন্ডিকেট ভাঙতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছিলেন তারা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিল আর স্লোগানে রূপসদী উত্তর বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয় এসময়। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা অর্থ কেলেঙ্কারিসহ সীমাহীন দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান জানান দেন স্থানীয়রা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে অনিয়ম। কোটি টাকা লোপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় একটি মহল। এমন সীমাহীন অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। এমন অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন সভাপতি রাশেদুল হক পলাশ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বেতন ও অন্যান্য ফি যথাযথভাবে ব্যাংকে জমা না করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
রাশেদুল হক জানান, জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ক্যাশ-খাতা ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করার পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক মূল হিসাব আড়াল করতে ডুপ্লিকেট বা ভূয়া ক্যাশ বই তৈরি করেছেন।
এসব নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান সভাপতি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনও।
এসব নিয়ে পুরো উপজেলায় তোলপাড় শুরু হলে গতকাল (১৮ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন নূর মোহাম্মদ জমদ্দার। এই প্রেক্ষিতেই এবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে স্থানীয়রা।
অবশেষে, দুপুরে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি রাশেদুল হক পলাশের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যালয়ের এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা না করা ও পূর্বের শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০২৪ এর ৫৩ ও ৫৪ ধারা অনুযায়ী ১৯ অক্টোবর থেকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করা হলো। যা প্রয়োজনে বর্ধিত করা হতে পারে।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক জানান, সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত চিঠি আমি পেয়েছি। কিন্ত, সেটি যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়নি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, ‘বরখাস্তের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে, অফিসিয়ালি জানিনি। আমরা কাল সোমবার এ বিষয়ে বসব। তখন, বিস্তারিত বলতে পারব।’
প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমাদ্দারকে বিকেল পর্যন্ত ফোনে বার বার চেষ্টা সত্বেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।জানা গেছে, তিনি শিক্ষক আন্দোলনের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। অবশ্য, গতকাল (১৮ অক্টোবর) তিনি সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্টত বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সভাপতিসহ একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।’
কেকে/এজে