তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চল। এই আন্দোলনের মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন। তিনি তাঁর পোস্টে এই মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নও চেয়েছেন।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলায়— লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা— একযোগে ১১টি পয়েন্টে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে লাখো মানুষের সমাগম হয়। এতে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সারজিস আলমের ধন্যবাদ জানানোর বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার পোস্টে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, দলমত নির্বিশেষে এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন দরকার। সারজিস আলম তার পোস্টে বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই। বিএনপিকে ধন্যবাদ এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।”
আন্দোলন সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু সরকারকে নভেম্বরের মধ্যেই মহাপরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন শুরু করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস আগেই তিস্তা মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়া হোক।” যদি সময়মতো কাজ শুরু না হয়, তাহলে তিনি রংপুরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে রংপুর বিভাগ অচল এবং স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।
দুলু জোর দিয়ে বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করতে হবে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এবং সরকারের ধীরগতির কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, তারা জাতীয় শত্রুতে পরিণত হবেন।”
দুলু তিস্তা সমস্যাকে ‘জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “দীর্ঘ ষোল বছর এক ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন রংপুরের মানুষের বুকের ভিতরে জগদ্দল পাথরের মত বসিয়ে দিয়েছে, তবুও আমাদের কান্না থামেনি।”
তিনি সতর্ক করে দেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের জন্য রাজধানী অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন এখন উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, প্রবাহিত ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিস্তা নদী রক্ষায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার লক্ষাধিক মানুষ ভাঙন ও চর উত্থানের শিকার হয়ে উদ্বিগ্ন। মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের স্লোগান ছিল—“জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই।”
কেকে/ আরআই