দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চাকসু নির্বাচনে ভিপি ও জিএসসহ ২৬টি পদের ২৪টিতে জয় পেয়েছে ছাত্র শিবির সমর্থিত "সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট" প্যানেলের প্রার্থীরা। বাকি দুই পদের এক পদে ছাত্রদল, অন্যটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে চারটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) বিবিএ অডিটোরিয়ামে চাকসু নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন উৎসবমুখর পরিবেশে ফলাফল ঘোষণা করেন।
চাকসুতে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন (ইব্রাহিম রনি) এবং জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
চাকসুর ১৪টি হলের ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে ইব্রাহিম হোসেন রনি ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ২২১টি আর জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ২৯৫টি। অন্যদিকে এজিএস পদে আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৪৪১টি। চাকসুতে পাঁচটি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৫১৬ জনের মধ্যে ১৭ হাজার ৭১৭ জন ভোট প্রয়োগ করেছেন, যা মোট ভোটের ৬৫ শতাংশ।
একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক তামান্না মাহবুব প্রীতি।
ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে বিজয়ী বাকি ২৪ জন প্রার্থী হলেন—খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ শাওন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হারেজুল ইসলাম, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক জিহাদ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক তানভীর আঞ্জুম শোভন, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তাহসিনা রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফনান হাসান ইমরান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক মোনায়েম শরীফ, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহান, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞা, সহ যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ওবাইদুল সালমান, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ফজলে রাব্বি তৌহিদ, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, নির্বাহী সদস্য জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা, আদনান শরীফ, আকাশ দাস, সালমান ফারসী এবং সোহানুর রহমান সোহান।
ছাত্রদল প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের শুরুর দিকে সাতটি অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকেও মার্কারের কালি মুছে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। যদিও এগুলো গুরুতর অভিযোগ ছিলো না। প্রশাসন অভিযোগগুলোর যথাযথ উত্তর দিয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে একটি প্যানেল। বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত ‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ প্যানেল অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। সামগ্রিকভাবে অধিকাংশ প্যানেল ফলাফল মেনে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বীকৃতি দিয়েছে।
চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সিনেটে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ফল ঘোষণার সময় "সিনেট চাই, সিনেট চাই" বলে স্লোগান দেন। এছাড়াও ফলাফল ঘোষণার সময় অডিটোরিয়াম "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর", "দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা", "ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই", " হিজাব, হিজাব" প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত ছিলো।
কেকে/এজে